চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে দু সংসদ সদস্যসহ ফরম নিলেন ৬ জন : মেহেরপুরের ৮ জন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনেই ৬৭৮ ফরম বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ফরম বিতরণ আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রথম দিনেই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে তিনজন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে তিনজনসহ মোট ৬৭৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। মেহেরপুর-১ ও মেহেরপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আওয়ামী লীগের ৮ মনোনয়ন প্রত্যাশী। সকাল ১০টা থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মী মনোনয়ন ফরম কিনতে হাজির হন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা-৪ (কদমতলী-শ্যামপুর) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী আওলাদ হোসেন ও শফিকুল ইসলাম সাইজুলের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

দিনভর পুরো বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় বিরাজ করে উত্সবের আমেজ। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফরম কেনার মাধ্যমে শুরু হয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা কার্যক্রম। মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। এবারের নির্বাচন হবে উত্সবমুখর পরিবেশে। তাতে সব ভোটার অংশ নেবেন। কেউ যদি ভোটারদের নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ হবে না। আশা করি বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রের পথকে সুগম করবে।’ মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম দিনেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্য গোপালগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর তিনি নিজের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেন। পরে অন্য প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম কেনা শুরু করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিনে দেশের সাতটি বিভাগের ৬৭৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমডাঙ্গার শেখ শামসুল আবেদীন খোকন, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহদফতর সম্পাদক আলমডাঙ্গার ছেলে নাজমুল ইসলাম পান্নু। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক হাজি আলী আজগার টগর, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন পিপি ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল আলম ঝণ্টু।

ঢাকা বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দ আবুল হোসেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, মুকুল বোসসহ ২১৫ জন, রাজশাহীর বিভাগ থেকে আবদুল লতিফ বিশ্বাস, জুনায়েদ আহমেদ পলক, জিন্নাতুন নেসা তালুকদারসহ  ৭৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে দীপু মনি, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সুবিদ আলী ভূঁইয়া, নূরুল ইসলাম, আ হ ম মুস্তফা কামালসহ (লোটাস কামাল) ১০৩ জন, খুলনা বিভাগ থেকে আবদুল হাই, বীরেন শিকদার, ননী গোপালসহ ৯৫ জন, রংপুর বিভাগ থেকে আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রায় রমেশ চন্দ্র, সতীশ চন্দ্র রায়, আসাদুজ্জামান নূরসহ ৮০ জন, সিলেট বিভাগ থেকে শাহাব উদ্দিন, ইমরান আহমেদ, মহসিন আলীসহ ৫২ জন এবং বরিশাল বিভাগ থেকে শ ম রেজাউল করিমসহ ৫৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আর ২২ জন মনোনয়ন ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। প্রথম দিনে এক কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ক্রয় ও জমা দেয়ার কার্যক্রম চলবে। তবে প্রয়োজন হলে সময় আরও বাড়ানো হবে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

মেহেরপুরের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের ৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) ও মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আওয়ামী লীগের ৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। গতকাল রোববার ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ঢাকাস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন। মেহেরপুর-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. গোলাম রসুল, মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান এবং সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ছহিউদ্দিনের ছেলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা সিটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল। মেহেরপুর-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নুর জাহান বেগম। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেহেতু সব দিক বিবেচনা করে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন সেহেতু তিনি অবশ্যই আশাবাদী। তিনি বলেন, মেহেরপুরের গণ মানুষের সাথে রাজনীতি করি। তাই রাতদিন দল ও মানুষের জন্য শ্রম দিচ্ছি। দলীয় কর্মসূচি কিংবা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সব সময় সক্রিয়ভাবে রয়েছি। তবে যারা গণবিচ্ছিন্ন এবং জেলার বাইরে অবস্থান করে ভোটের সময় মনোনয়ন নেয়ার জন্য অতিথি পাখির মতো দৌড়ঝাপ করেন তাদের বাদ দিয়ে যদি মনোনয়ন হয়, সেক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। গতবার মনোনয়ন পাওয়ার কথা থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তে তা না হলেও এবারে বেশ আশাবাদী অ্যাড. মিয়াজান আলী। তিনি বলেছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করছি। গতবার সভাপতি পেয়েছেন এবার তিনিই দাবিদার। মাঠ পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রমে তার অবস্থান ভালো বলে দাবি করেন। তবে যদি মনোনয়ন না হয় সেক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রী যে নির্দেশ দেবেন সে মতোই তিনি কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে মেহেরপুর-২ আসনের দুজন মনোনয়ন প্রত্যাশী একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একেএম শফিকুল আলম নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মনে করেন। তিনি বলেন দল তাকে যে জায়গায় দেবে সেখানেই কাজ করবেন। নিজে মনোনয়ন পেলে যেভাবে কাজ করবেন অন্য কেউ মনোনয়ন পেলেও নিজের মনে করেই তিনি কাজ করবেন বলে জানালেন। একই রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নুরজাহান বেগম বলেছেন, আজীবন দলের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করছি। তাকে মনোনয়ন দিলে বিজয় ছিনিয়ে এনে দলের সম্মান রক্ষা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোয়নপত্র ক্রয় করা যাবে। দুটি আসনের আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থী ফরম কিনবেন বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে শাহরীয়ার কবীর আজ সোমবার মনোনয়পত্র কিনতে পারেন। চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে একই আসনে মনোনয়পত্র ফরম কিনবেন মীর্জা সুলতান রাজার ছোটভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা মীর্জা শাহরিয়ার লণ্টুসহ অনেকে।