চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর ও শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন এলাকার গ্রামগুলোতে মাদক ব্যবসা এবং সেবনকারী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ও শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন এলাকার কয়েকটি গ্রামগুলোতে মাদক ব্যবসা এবং সেবনকারী সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মাদকসম্রাটরা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে এখন রামরাজত্ব কায়েম করেছে।

কুতুবপুর ইউনিয়নের শম্ভুনগর গ্রামের সেলিমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নেই এর কোনো প্রতিকার। একটি গোপনসূত্রে জানায়, চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর ইউনিয়নের শম্ভুনগর গ্রামের ক্যালানপাড়ার আশাল আলীর ছেলে সেলিম দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ বাড়িতে গাঁজা বিক্রি করার পাশাপাশি সেবনের আসর বসাচ্ছে। তার বাড়ি থেকে গাঁজার চালান ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয় বলে জানালেন গ্রামের অনেকই। সে এই এলাকার মাদকসম্রাট হিসেবে পরিচিত হলেও কুতুবপুর ইউপির শম্ভুনগর গ্রামের এক মেম্বার জানান, সেলিম মাদকদ্রব্যসহ কিছুদিন আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সেখানে সে মুচলেকা দেয়ার পর থেকে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়।
অপরদিকে শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের কিরণগাছি গ্রামের শ্রী গোপালপাল দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে গাঁজা বিক্রি আসর বসিয়ে আসলেও তার ছেলে কোরবান প্রকাশ্যে বাংলা মদ বিক্রি করছে। এলাকার এমন কেউ জানে না তার বাংলা মদ বিক্রির সংবাদ। তবে মদ বিক্রি করার জন্য কোরবান প্রতিনিয়ত স্থানীয় এক সাংবাদিককে দেয় মাসোহারা। কোরবান মাসোহারা দিয়ে প্রকাশ্যে বাংলা মদ বিক্রি করছে বলে গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি জানালেন। নেই এখানে এর কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা।

চুয়াডাঙ্গার ভুলটিয়া গ্রামের আ. মান্নান গাঁজাসহ কিছুদিন আগে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। সে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগে জেল খাটলেও সে আবারোও গাঁজা ব্যবসা করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে গ্রামের ক্ষমতাসীন এক নেতা জানিয়েছেন। সে গ্রামবাসীর সামনে আপাতত গাঁজা ব্যবসা বন্ধ করলেও গোপনে তার বাড়িতে গাঁজা সেবনের আসর হরদমেই চলছে। তবে এলাকার এক সাবেক মেম্বার বললেন, ইতঃপূর্বে মান্নান গাঁজা বেচাকেনা আসর করে এলেও বর্তমান সময়ে তার বাড়িতে গাঁজা সেবনকারীরা আসে না। সে সংসার চালাতে পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করছে। আ.মান্নান গাঁজার ব্যবসা করছে এই সংবাদটি আদৌও সঠিক নয়।

অপরদিকে ভুলটিয়া গ্রাম এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুলটিয়ার গ্রামের কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় ৬ ডজন গাঁজা সেবনকারীর নাম শোনালেন অনেকই। পুলিশ প্রশাসন গ্রাম থেকে গাঁজা ব্যবসায়ীদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও গ্রামের কয়েকজন তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার নামে অর্থ বাণিজ্য করার একাধিক অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে মর্তুজাপুর গ্রামের নদীপাড়া, মসজিদপাড়াসহ কয়েকটি পয়েন্টে গাঁজা বেচাকেনার ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পুলিশ কয়েকজন গাঁজা সেবনকারীদের রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে মাঝে মধ্যে হাত খরচের টাকা নিয়ে আসার অভিযোগ উঠলেও তার সত্যতা খোঁজে পাওয়া যায়নি। মর্তুজাপুর গ্রামের কয়েকজন গাঁজাসেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দরবার শরিফের মরিদ আনার নামে মাথার ওপর হলুদ পাকড়ি, পরনে শাদা জামা পরে নিজ বাড়িতে গাঁজা ব্যবসা করার পাশাপাশি সেবনের আসর বসাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, গাঁজাসেবন বিক্রি করবো না বলে সরোজগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা মিটিঙে পুলিশ সুপারের কাছে ওয়াদা করে আসা হলেও গ্রামের কয়েকজন আবারও মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। গ্রামের এক সচেতন ব্যক্তি বললেন, গ্রামে গাঁজা বিক্রি হচ্ছে, এমন সংবাদ আমার জানা নেই। তবে গাঁজাসেবনকারী সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

অপরদিকে দশমী ও আলিয়ারপুর গ্রামের এক গাঁজাসম্রাট ফেরি করে গাঁজা ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গাঁজা ব্যবসা এলাকায় প্রকাশ্য না করলে দশমী স্কুলপাড়ার লম্বু যুবক মর্তুজাপুর গ্রামের এক মাদকসম্রাটের বাইসাইকেলের পেছনে বসে ঝিনাইদহ জেলার আশপাশে এ গাঁজার ব্যবসা করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

অপদিকে দিনের পর দিন কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা জেগে উঠেছে। তারা এখন মাদকের রামরাজত্ব কায়েম করে বসছে। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন এলাকায় দীর্ঘসময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ করার অভিযান অব্যাহত থাকার কারণে ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে মাদকব্যবসা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টির প্রতি যথাসময়ে প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছে।