চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিক্ষক মনোয়ারুল হুদা : এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু’দিনের শোক ঘোষণা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সকলের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় নগরবোয়ালিয়া-হাটবোয়ালিয়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হলো জনপ্রিয় শিক্ষক মনোয়ারুল হুদার লাশ। গতকাল ২৯ নভেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়। মনোয়ারুল হুদার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ নভেম্বর বিকেলে ঢাকার মোহাম্মদপুর মেট্রোপলিটন হাউজিং সোসাইটির মসজিদে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতপরশু দুপুর সোয়া ২টায় সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন।
মরহুমের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাউসার আহমেদ বাবলু, সাবেক চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন লাড্ডু, মরহুমের বড় জামাই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর আক্তার হোসেন, হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আব্দুস সাত্তার, মরহুমের বড় ছেলে সুইট এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা।
এদিকে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন এই জননন্দিত শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকা শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, হাটবোয়ালিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা, হাটবোয়ালিয়া টেকনিক্যাল কলেজ (প্রস্তাবিত), হাটবোয়ালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেনেসাঁ কিন্ডারগার্টেন, ভাংবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ থেকে ২ দিনের শোক ঘোষণা করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে গত ২ দিন ধরে বিস্তর স্মৃতিচারণমূলক লেখালেখি হচ্ছে। হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও মরহুমের সহকর্মী কবি আসিফ জাহানের ফেসবুক স্ট্যাটাসের অংশবিশেষ উল্লেখ করা হলো ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার প্রয়াত মনোয়ারুল হুদা এক জ্বাজল্যমান নক্ষত্র। আমার দেখা দৃষ্টিতে এ মানুষটি অনিন্দিত এক কালজয়ী পুরুষ। কথায় কাজে ও সততায় বড় ন্যায় নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। ত্যাগের মহিমা ছিলো অতুলনীয়। হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে পা রাখার পর এ মানুষটিকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। পরিচ্ছন্ন গোছালো জীবনযাপন করতেন। অন্যায় তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। দৃঢ়চেতা এ মানুষটির বর্ণাঢ্য আলোকোজ্জ্বল জীবন আমাদের শিখিয়েছেন বহুমাত্রিক পথ চলার অভিনব অভিজ্ঞতা ও কৌশল। তার সুচারু শৈল্পিক কর্মজীবন আমাদের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। তিনি নিরবচ্ছিন্ন পথ হেঁটেছেন কেবল দেবার জন্য, নেবার নয়। অনিন্দিত এ সামাজিক মানুষটি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অবিচল। ধর্মীয় গোড়ামির দায়ভার এড়িয়ে সত্যিকারের ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলবার সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন। মেধা ও মননে তিনি ছিলেন সৌর্ন্দয্যের মূর্তপ্রতীক। সহজসরল জীবনাচার তার জীবনে লক্ষণীয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার দান-অনুদান অনুস্বীকার্য।’ আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মৃত মোবারক বিশ্বাসের ছেলে মনোয়ারুল হুদা ৬০’র বিশ্ববরেণ্য জাস্টিজ ড. রাধা বিনোদ পাল ও যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা প্রাক্তন এমএলএ ডা. রিয়াজ উদ্দীন আহমেদের হাতেগড়া হাটবোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোনো লোভনীয় চাকরিতে যোগদান না করে তিনি শিক্ষকতাকেই জীবনের চরম ব্রত করে নিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি উপজেলার সবচে’ সৎ ও শাদা মনের মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোপন সংস্থার নিকট। পৃথিরী বিখ্যাত নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী মনোজ কুমার পালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের ব্যাপারে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছিলেন। শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি এলাকায় পরিগণিত হতেন। সকলেই শ্রদ্ধা ও ভালোবেসে তাকে ইনু প-িত নামে অভিহিত করতেন। অবসরের পরও তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। ভাংবাড়িয়ায় ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের জন্য জমি দান করেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি হাটবোয়ালিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং ও টেকনিক্যাল কলেজ (প্রস্তাবিত) নির্মাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন।