চলে গেলেন ফজল শাহাবুদ্দীন

স্টাফ রিপোর্টার: কবি সাংবাদিক ফজল শাহাবুদ্দীন আর নেই। কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৮ বছর। একুশে পদকপ্রাপ্ত পঞ্চাশ দশকের জনপ্রিয় এ কবি বিচিত্রার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময় সচিত্র সন্ধানী সম্পাদনা করতেন তিনি। আসরের নামাজের পর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রথম এবং বাংলা একাডেমিতে দ্বিতীয় জানাজার পর আজই তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ফজল শাহাবুদ্দীনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সাহিত্যাঙ্গনে তার ঘনিষ্ঠজনেরা। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘ফজল আমার বাল্যবন্ধু। ওর এভাবে চলে যাওয়ায় আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। আমি পুরো বাকরুদ্ধ।’

কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘পঞ্চাশ দশকের প্রথমদিকে ফজল শাহাবুদ্দীনের একটা উপন্যাস পড়ি আমি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখেছেন। তার সাথে আমি একসাথে রেডিও ও টেলিভিশনে কবিতা পড়েছি। একপর্যায়ে তার সাথে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তার কবিতা আমার ভালো লাগতো। তার কবিতার বাক্যগঠন অনেক ঝকঝকে। আমি তার একজন মুগ্ধ পাঠক। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকলেও তার মৃত্যুকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের অনেক ক্ষতি হলো, যা পূরণ হবার নয়। তার সম্পাদনায় বিচিত্রা সেই সময়ের সাড়া জাগানো পত্রিকা ছিলো। বিচিত্রা বিনোদন সাংবাদিকতার পথ দেখিয়েছে, আর তিনি ছিলেন পথিকৃত্।’

কবি হেলাল হাফিজ বলেন, ‘ফজল শাহাবুদ্দীন একজন প্রথম সারির কবি। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তার সাথে স্বাধীনতার আগে দৈনিক পাকিস্তান এবং পরে দৈনিক বাংলায় অনেক দেখা সাক্ষাত হতো। তখন কবি শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, আহসান হাবীব, সানাউল্লাহ নূরী তারা সবাই একসাথে আসতেন দৈনিক বাংলায়। অনেক গল্প আড্ডা হতো আমাদের। আমি খুবই মর্মাহত তার মৃত্যুসংবাদ শুনে। তিনি তার সাহিত্যকর্মের জন্য অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

ফজল শাহাবুদ্দীন ১৯৩৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। কবি ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি সমানভাবেই পরিচিত ও জনপ্রিয় ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালেই ফজল শাহাবুদ্দীন বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। ১৯৮৮ সালে পান অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’। ফজল শাহাবুদ্দীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তৃষ্ণার অগ্নিতে একা প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। তার সর্বশেষ গ্রন্থ একজন কবি একাকী প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। কবি ফজল শাহাবুদ্দীনের মোট ২৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবির উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অন্তরীক্ষে অরণ্য, পৃথিবী আমার পৃথিবী, আলোহীন অন্ধকারহীন, আমার নির্বাচিত কবিতা, অকাঙ্ক্ষিত অসুন্দর, সনেটগুচ্ছ ইত্যাদি। ফজল শাহাবুদ্দীনের ছোট ছেলে অমি শাহাবুদ্দীন তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার পিতা আজ হয়তো নেই কিন্তু তিনি তার সৃষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকবেন অনেক দিন।’