গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হাসনাত

 

হাসনাতকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ : ৫৪ ধারায় তাহমিদ ৬ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলায় প্রথম আসামি হিসেবে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সেই সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গতকাল শনিবার তাকে এই মামলায় আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। আদালতে দাখিল করা পুলিশের রিমান্ডের আবেদনে হাসনাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, হাসনাত এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। এই ধরনের হামলা চালিয়ে দেশকে বিদেশিদের কাছে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা ছিলো তার। এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তবে হাসনাতের সাথে ৫৪ ধারায় আটক হওয়া কানাডার টরোন্টো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খানকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তাহমিদকে ৫৪ ধারায় দায়ের করা মামলায় আরো ছয়দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

গুলশান হামলার ৪২ দিন পর হাসনাতকে গ্রেফতার দেখানোর বিষয় নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাত রেজাউল করিমের কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি হাসনাত রেজাউল করিম হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হতে পারেন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে হাসনাতকে আটদিন জিজ্ঞাসাবাদে গুলশান হামলায় তার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেছে কি-না, সে বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা অফিসিয়ালি কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে বলেননি।

গত ২ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান শেষে উদ্ধার ১৩ জনসহ ৩২ জনকে নেয়া হয়েছিলো গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই করে তাদের অনেককে ছেড়ে দেয়া হলেও হাসনাত ও তাহমিদকে ফিরে না পাওয়ার কথা জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগের তোলা এক ছবিতে ক্যাফের ছাদে দুই ব্যক্তির সাথে হাসনাত রেজাউল করিমকে দেখা যায়। ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন হলো নিহত জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ ও অপরজন তাহমিদ হাসিব খান। জঙ্গি রোহানের গলায় একে-২২ রাইফেল ঝুলছিলো। তাহমিদের এক হাতে ছিলো পিস্তল। এছাড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হাসনাত রেজা করিম ক্যাফের ভেতরে এক জঙ্গির সাথে কথা বলছেন। এসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তোলে। ৩৩ দিন পর ৪ আগস্ট এই দুইজনকে ডিবি পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আট দিনের রিমান্ডে নেয়।

সূত্র জানায়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফ্যাকাল্টির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম হিযবুত তাহরীরের অন্যতম সমন্বয়ক। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অন্তত চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরকে পৃষ্ঠপোষক করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০১৩ সালে হাসনাত রেজাউল করিম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে অব্যাহতি নেন। তবে দুই বছর পর গত বছরের শেষের দিকে হাসনাত আবারও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পর ফেসবুকে তার ছবি প্রকাশ হলে ৩ জুলাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষকদের তালিকার নাম থেকে হাসনাত রেজাউল করিমের প্রোফাইল সরিয়ে ফেলে।

ৱ্যাবের একটি তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকা থেকে দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের (ডিআইবি) ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের ওয়েবপেজ আত-তামকীনের প্রধান এডমিন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিলো দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ। হিযবুত তাহরীর, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, হরকাতুল জিহাদ ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলাম) এই চারটি জঙ্গি সংগঠন থেকে বেছে বেছে সদস্য নির্বাচন করে দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়েছে। এই জঙ্গি সংগঠনে ৩ থেকে ৬ জন পর্যন্ত একেকটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এক গ্রুপের সঙ্গে অপর গ্রুপের কোনো পরিচয় থাকে না। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্রে কয়েকটি গ্রুপ কাজ করছে। পরিকল্পনা, অর্থায়ন, অস্ত্র সরবরাহ, তথ্য সংগ্রহ, রেকি করা, মনিটরিংসহ বেশ একটি গ্রুপের সমন্বয়ে হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে। এসব তথ্য দাওলাতুল ইসলাম বাংলাদেশের ৬ সদস্য র্যাবকে জানিয়েছে।

প্রত্যেক সদস্যের নাম-পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া পরিচয়ে তারা গ্রুপ গঠন করে। সংগঠনের নিয়ম হচ্ছে, কারো নামের বাইরে তার বাবা-মার পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিচয় সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এতে করে অপারেশন পরিচালনার সময় কেউ ধরা পড়লে গোয়েন্দারা তার কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারবে না। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মনিটরিং করতে হাসনাত রেজাউল করিম সপরিবারে মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হামলার ঘটনার পরদিন ২ জুলাই সকালে প্যারা কমান্ডোদের অভিযানের আগে এক জঙ্গির সাথে কথোপথন ও চলাফেরার দৃশ্য ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র প্রকাশ পায়।