খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি : নতুন শিল্প-কারখানার জন্য জমি খুঁজছেন উদ্যোক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার: খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দ্রুততার সাথে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলা এবং মংলা বন্দরে গতি ফিরে আসায় খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরে গার্মেন্টস, সিরামিক ও ট্যানারিসহ বিভিন্ন শিল্প ও কল-কারখানা গড়ে উঠছে। নতুন নতুন শিল্প ও কল-কারখানা স্থাপন করার জন্য শিল্পোদ্যোক্তারা খুলনা ও বাগেরহাটসহ এ অঞ্চলে জমি খুঁজছেন।
বিনিয়োগ বোর্ড সূত্র জানায়, গত এক বছরে খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগ হয়েছে ৬৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর আগের বছর ২০১৪ সালে ৩১টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছিল ৩৯৮ কোটি টাকা। গত বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে খুলনায় ৩৮টি শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য নিবন্ধন দেয়া হয়। এর মধ্যে বছরের শুরুতেই নিবন্ধন নিয়েছে ‘গার্মেন্টস এক্সপোর্ট হাউজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাক রফতানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি যশোরে তাদের কারখানা স্থাপন করবে। ‘বিজি ব্ল্যাক টাইগার’ নামে দেশের সবচেয়ে বড় আধানিবিড় চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন হচ্ছে খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার লঞ্চঘাট এলাকায়। ফুলতলা উপজেলার উত্তরডিহীতে ‘সুপার এক্স লেদার লিমিটেড’ নামে যাত্রা শুরু করেছে চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। গত বছরের এপ্রিল মাসে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালীতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা বিনিয়োগে যাত্রা শুরু করে ‘মুন স্টার সিরামিক’। প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের দু’টি কারখানা হচ্ছে খুলনার রূপসায়। এসবের পাশাপাশি ফ্লাক ডোর নির্মাণ, বৈদ্যুতিক মিটার ও যন্ত্রাংশ, তৈজসপত্র, গ্যাস এ্যাম্পুলসহ মোট ৩৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গত এক বছরের গড়ে উঠছে।
খুলনা-বাগেরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই খুলনা অঞ্চলের জমির হাতবদল বেড়েছে। বিশেষ করে গত দু’বছর বড় বড় শিল্প গ্রুপ মংলা ও রামপালসহ আশপাশ এলাকায় জমি কিনেছে। তাদের মধ্যে এনার্জিপ্যাক, এনার্জি লিমিটেড, সান মেরিন, ফোমকম, নাভানা উল্লেখ্যযোগ্য। খানজাহান আলী সেতুর (রূপসা সেতু) দুইপাশের জমি শিল্প উদ্যোক্তারা কিনে নিয়েছেন অনেক আগে। বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেলে এ অঞ্চলে আরো নতুন নতুন শিল্প ও কল-কারখানা গড়ে উঠবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে শুরু হওয়া গ্যাস সেক্টর ডেভল্পমেন্ট প্রজেক্ট ফেজ-২ এর আওতায় খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে রয়েছে ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভেড়ামারা থেকে ঝিনাইদহ-যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ।
২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস নেটওয়ার্ক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়। প্রকল্পটিতে এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে ৫৩০ কোটি টাকা অর্থায়ন করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প ব্যয় ৬০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া এ পাঁচ জেলার জন্য প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিলো ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জমি অধিগ্রহণ, মালামাল ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্নসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দেয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিলো গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সূত্রমতে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ভেড়ামারা ও পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মানদীর নিচ দিয়ে সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপনে জটিলতা রয়েছে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও নদীর নিচ দিয়ে সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লি¬ষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনা অঞ্চলের পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ ব্যতীত পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ সুফল পাবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। এ কারণে অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
খুলনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারপার্সন শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন বলেন, পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু ও মংলা বন্দরে গতি ফিরে আসায় খুলনা অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ছে। শিল্পোদ্যোক্তারা এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দ্রুত পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হলে এ অঞ্চলে আরো নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক এসএম রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। খুলনাসহ পাঁচটি জেলায় গ্যাস সরবরাহের কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ভেড়ামারা ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ থেকে পাইপ স্থাপনের কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে আন্তরিক। ইতিমধ্যে সরকার এ অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। মংলা বন্দরেও গতি ফিরে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা এ অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়েছে।