কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: গ্রামের প্রায় ৯৫ ভাগ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। আর্সেনিক সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ বছরে গ্রামের দুজন মারা গেছে। এখনও অসুস্থ রয়েছেন দুই শতাধিক নারী-পুরুষ। আর দুই হাজার মানুষ আর্সেনিকের চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের চিত্র এটি। গ্রামটির হাজারো মানুষ জেনে বুঝেই আর্সেনিকের মতো বিষপান করে চলেছেন। শুধু বাজিতপুর নয় কুষ্টিয়ার ১১ গ্রাম আর্সেনিকের কবলে। এছাড়াও ভেড়ামারা, দৌলতপুর, সদর ও কুমারখালী উপজেলার ১১ গ্রাম আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের কার্যকরী তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রাম। এ গ্রামে আর্সেনিকের সমস্যা প্রায় ৩০ বছর ধরে। ১০ বছর আগে গ্রামের অধিকাংশ খাবার পানির কলেই আর্সেনিক ধরা পড়ে। এরপর অনেকেই স্থান পরিবর্তন করে একাধিকবার অন্যত্র টিউবয়েল বসালেও তাতে আর্সেনিক মুক্ত পানি পাওয়া যায়নি। এভাবেই আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকটা নিরুপায় হয়ে জেনে শুনেই এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষকে প্রতিনিয়ত আর্সেনিক বিষপান করতে হচ্ছে। এখন গ্রামের দু শতাধিক নারী-পুরুষ আর্সেনিক সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত। এখানকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরাসহ ২ হাজার মানুষ আর্সেনিকের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আক্রান্তরা হাতে পায়ে গুটি, সারা গায়ে কালো তিল দাগসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে শরীরে কালো কালো দাগ, হাতে পায়ে ঘা দেখা দিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে না পারায় আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ এই দীর্ঘ সময়ে মানুষকে সচেতন করতে বা আর্সেনিক মুক্ত পানির উৎস তৈরি করতে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামবাসীরা জানান, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে আর্সেনিক সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২ বছর আগে মারা যান মিনারুল। চারবছর আগে হাউস নামে অপর এক জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে মৃত দুজনের দুইভাইও আর্সেনিকে আক্রান্ত। মৃত হাউসের ভাই রুশনাইয়ের এখন ডানপায়ে ঘা হয়ে এক আঙ্গুল কাটা পড়েছে। তবে এই ঘা আর্সেনিক না কি অন্য কোনো কারণে তা তাদের জানা নেই।
মালিহাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, আর্সেনিক মোকাবেলায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন জানান, উক্ত গ্রামে আর্সেনিকের ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। তবে এটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী হাচানুজ্জামান জানান, সরকার আমাদের স্বল্প বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। যা দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সংগঠন গুলো সঠিক স্থানে প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন করছে না। ভয়াবহ এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকারী পদক্ষেপ নেবে সরকার, এলাকাবাসীর এমনটাই দাবি।