কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ১৫ দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার মোকামে তিন ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা বেড়েছে। মিলমালিকদের দাবি, ধানের স্বল্পতা ও দাম বাড়ার কারণে তারা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। কুষ্টিয়ার খাজানগরে ৩৬৪টি সরকারি নিবন্ধিত চালকল রয়েছে। এর মধ্যে অটো রাইস মিলের সংখ্যা ৩১। এখান থেকে প্রতিদিন এক-দেড় শ ট্রাক (প্রতিটিতে ১৫ টন) চাল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। খাজানগর এলাকার ছয়জন মিলমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি মিনিকেট (সরু) চাল ৪২ টাকা ৬০ পয়সা, কাজললতা ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা ও আটাশ ধানের চাল ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়। ১৫ দিন আগেও এখানে মিনিকেট ৪০ টাকা ৬০ পয়সা, কাজললতা ৩৪ টকা ৪০ পয়সা ও আটাশ ধানের চাল ৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক ও দাদা রাইস মিলের মালিক জয়নাল আবেদীন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, এখন কোথাও তেমন ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ধানের দাম বেড়ে গেছে। উত্তরবঙ্গ থেকে ধান আসে। কিন্তু এবার ভয়াবহ বন্যার কারণে তা আসছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তা আনতে অনেক খরচ হচ্ছে। এসব কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
ফোর স্টার রাইস মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোফিজ উদ্দিন বলেন, প্রতি মণ ধান আগের চেয়ে ১৫০-২০০ টাকা বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। চালের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খাজানগর মিলগেটের তুলনায় এখানে চালের দাম আরও বেড়েছে। খাজানগর থেকে কুষ্টিয়া শহরের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। এটুকু ব্যবধানেই ওই তিন ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি আরও দুই টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। শহরের একটি বাজারের চাল ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, মিলগেট থেকেই এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও কেজিতে কয়েক টাকা বেড়েছে।
শহরের একজন খাদ্য ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে সরু চালের তুলনায় মোটা চালের সংকটই এখন বেশি। এ কারণে মোটা চালের দামও অনেক বেড়েছে। ১৫ দিন আগে মোটা চাল কেজিপ্রতি ছিল ২৭ টাকা; এখন ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণে একটি চক্র মোটা চাল মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
খাজানগরের ছোট দুটি চালকলের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের মতো ছোট মিলমালিকদের হাতে এখন চালের ব্যবসা নেই। বড় বড় অটো মিলের মালিকেরা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরা ইচ্ছা করলেই চাল মজুত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করতে পারেন। কারণ, তাঁদের চাল রাখার জন্য পর্যাপ্ত গুদাম রয়েছে। এভাবে মজুত করলে বাজারে দাম বাড়তে বাধ্য। তবে মিলমালিকদের নেতা জয়নাল আবেদীন প্রধান দাম বাড়ার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরাই মিলমালিকদের নাম ভাঙিয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করে থাকেন। এতে করে মিলমালিকদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।