কাবা শরিফ ও মসজিদুন নববী রক্ষায় বাংলাদেশ

 

গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমপ্রতি অনুষ্ঠিত তাহার সৌদি আরব সফরের নানা খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন। এই সময় তিনি জানান যে, মক্কার কাবা শরিফ ও মদিনা মনোওয়ারার মসজিদে নববী রক্ষায় প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাঠানো হবে। সৌদি সরকার চাইলে বাংলাদেশ সরকার এই কাজে সেনাদল পাঠাতে প্রস্তুত এমন প্রতিশ্রুতি তিনি সৌদি সরকারকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে আমরা মোবারকবাদ জানাই। কারণ ইসলামে এই দুটি পবিত্র স্থাপনার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। কাবা শরিফকে অভিহিত করা হয় বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর হিসেবে। বায়তুল মামুরের ঠিক সোজাসুজি এর অবস্থান। পৃথিবীর কেন্দ্রভূমিও বলা হয়। এটি মুসলমানদের পবিত্র কেবলা। সারা বিশ্বের মুসলমান কাবা শরিফের দিকে মুখ করে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। শুধু তাই নয়, হজ উপলক্ষে এই কাবা শরিফ তওয়াফ করেন হাজিরা। আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারীমের সূরা বালাদে এই পবিত্র নগরী মক্কা মুয়াজ্জামার নামে শপথ করেছেন। ফলে এর মর্যাদা আরও বুলন্দিত হয়েছে। অন্যদিকে খাতামুন নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মদের (স) রওজা মোবারক রয়েছে সোনার মদিনায়। তাই এই মক্কা মুকাররামাহ ও মদিনা মুনাওয়ারার মর্যাদা সমগ্র সৃষ্টি জগতে সবচেয়ে বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনের সৌদি আরব সফর করেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অনেক ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এই ঐতিহাসিক সফর উভয় দেশের জন্যই মাইলফলক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিশেষ দিক পরিবর্তনকারী। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশ আজ আর আগের জায়গায় নেই। একদা এই দেশকে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ মিসকিন বলে তিরস্কার করতো। কিন্তু আজ সেখানে একটি সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমীহ করা হচ্ছে। সারা মুসলিম জাহানে বাংলাদেশের কদর বাড়ছে। মহাজোট সম্পর্কে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কারণে সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এখন অত্যন্ত সম্মানের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। উচ্চারিত ও প্রচারিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও।

উল্লেখ্য, সৌদি বাদশাহ শুধু বাদশাহ নন, তিনি হারামাইন খ্যাত মক্কা ও মদিনা শরিফের খাদেমও বটে। এর দেখভালের দায়িত্ব পালন করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। অনুরূপভাবে এমন দুই পবিত্র স্থানের রক্ষায় যেকোনো সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারাটাও অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক। মক্কায় মাকামে ইব্রাহিম,  জমজম কূপ, হেরা গুহা, মহানবীর (স) জন্মস্থান, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানসহ বিভিন্ন পবিত্র স্থাপনা রয়েছে। মদিনায় রয়েছে মসজিদে নববীসহ ওহুদ ও খন্দকের ময়দান, কেবলাতাইন মসজিদ প্রভৃতি। এইগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে যা অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবজনক। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এটিকে নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করেন। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকতের দুয়ার খুলে যাবে আমাদের জন্য। এই সময়োপযোগী ও বিরল সম্মানজনক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।