কাগজি লেবুচাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের ইছাহক আলী

 

মহাসিন আলী: মেহেরপুর জেলা সদরের পিরোজপুর গ্রামের সবজিব্যবসায়ী ইছাহক আলী এখন সফল লেবুচাষি। তার আবাদ করা বাগানের কাগজি লেবু বিক্রি করে প্রতি বছর ১০ লাখ টাকা তার ঘরে আসবে এ প্রত্যাশা তার। লেবুচাষে তার সাফল্যে এলাকার অনেকে লেবুচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইছাহক আলী এক সময় ঘোড়ার গাড়িতে করে সবজিব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে তিনি মেহেরপুর থেকে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকার বাজারে সবজি নিতেন। সেখানে তিনি ভালো দামে কাগজি লেবু বিক্রি হতে দেখে লেবুচাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বাড়ি ফিরে সিদ্ধান্ত নেন কাগজি লেবুচাষ করার।

ইছাহক আলী জানান, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী রঘুনাথপুর মাঠে নিজের ৩ বিঘা জমিতে কাগজি লেবুচাষ করেন। তিনি সদর উপজেলার কোলা গ্রামের রজব নার্সারি থেকে চারা কিনেছিলেন। গত বছর তিনি এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। লেবুচাষের শুরু থেকে গত বছর পর্যন্ত তার ওই ৩ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছিলো মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ভালো লাভ পাওয়ায় গত বছরই তিনি জমি লিজ নিয়ে আরো সাড়ে ৯ বিঘা জমিতে লেবুচাষ করেছেন। তিনি কাগজি লেবুর পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের এলাচি লেবুর চাষ করেছেন। এ লেবুর চারা সংগ্রহ করেছেন সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে। জমিতে সেচ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যা বাবদ ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। চলতি বছরে তার গাছে প্রচুর লেবু এসেছে। এক বছরের গাছ আকারে ছোট হলেও এবছর ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বললেন একবার চাষ করলে ১০ থেকে ১২ বছর লেবু পাওয়া যাবে। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছরে ওই বাগান থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার বাগানের উৎপন্ন লেবু রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে।

ইছাহক আলীর ছেলে লাবলু হোসেন জানান, বাবার কাছে তিনি সহযোগিতা করেন। দিনের অধিকাংশ সময় তিনি লেবু বাগানে থাকেন ও বাগান পরিচর্যা করেন। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত লেবু এসেছে। লেবু বিক্রি শুরু হয়েছে। বিক্রি চলবে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। লেবুচাষ করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোটরসাইকেল কিনেছেন তিনি। পাকা বাড়ি তৈরির কাজও চলছে তাদের। তাদের বাগানের লেবু মেহেরপুরের বাজারে চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি হচ্ছে।

প্রতিবেশী যুবক পাতারুল ইসলাম জানান, ইছাহক আলীর লেবুচাষে সাফল্যে এলাকার অনেকে লেবু চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি সামনের বছরে ৩ বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করবেন। ইতোমধ্যে পিরোজপুর গ্রামের সামছুল হক ২বিঘা, ইমাদুল হক ১ বিঘা ও রবিউল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে লেবুচাষ করেছেন।

তবে এলাকার অনেক চাষি বললেন, লেবু, কলা, পেয়ারা, পেঁপেসহ বিভিন্ন মরসুমি ফল ও সবজিচাষে সফলতা পেলে চাঁদাবাজদের টার্গেটে পড়তে হয়। চাষিকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হতে হয়, অন্যথায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোদাজ্জেল হোসেন জানান, ইছাহক আলীর লেবু চাষের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকে লেবুর চাষ করতে শুরু করেছেন। তিনি মাঝেমাঝে ইছাহক আলীর লেবুর বাগান পরিদর্শনে যান এবং পরিচর্যা ও ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।