কলমির বীজ বিক্রি করে মেহেরপুরের কৃষকদের ভাগ্য বদল!

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের দু’টি গ্রামের কৃষকরা কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। ওই দু’গ্রামের শতাধিক কৃষক পরিবার কলমি শাকের বীজ উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেকে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া শিখাচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি আশপাশের কয়েকটি গ্রামের চাষিরাও কলমি শাকের বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের রায়পুর ও খন্দকারপাড়া গ্রামের কৃষকরা প্রায় ১৫ বছর ধরে কলমি শাকের বীজ উৎপাদন করছেন। বিভিন্ন বীজ কোম্পানি এ দু’গ্রামের মাঠের মাটির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে তাদের কলমি শাকের বীজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেন। কৃষকের উৎপন্ন বীজ প্রথম দিকে কোম্পানি কিনে নিয়ে যেতো। এতে তারা অধিক লাভবান হন। এরপর থেকে ওই দু’গ্রামের কৃষকরা নিজের ইচ্ছায় কলমি চাষ করেন। বর্তমানে তারা বীজ কোম্পানির লোকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছেও বীজ বিক্রি করছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছে জেলায় কোথায় কোথায় কি পরিমাণ কলমির আবাদ হচ্ছে সে হিসেব খাতা-কলমে নেই। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, বিভিন্ন বীজ কোম্পানির মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন মাঠে লাল শাক, পুঁই শাক, কলমি শাক, লাউ, চিচিংগাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ উৎপন্ন হচ্ছে। চাষিরা বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ চেয়ে যোগাযোগ করলে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তার পরামর্শ দেবেন। সরেজমিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার বায়পুর ও খন্দকারপাড়া গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ কলমি শাকের চাষ হচ্ছে। মাঠের কৃষকরা জানালেন, চলতি বছরে রায়পুর ও খন্দকারপাড়া গ্রামের শতাধিক কৃষক বীজ উৎপাদনে প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে কলমি চাষ করছেন। রায়পুর-খন্দকারপাড়া মাঠে গিয়ে আরও দেখা যায়- কেউ কেউ পাকা কলমি কেটে ক্ষেতে শুকাচ্ছেন। কেউ বাড়িতে নিয়ে ঠেসার মেশিনে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করছেন। এ ফসলে লাভ পাওয়ায় কৃষানীরাও খুশি। এ কাজে কৃষককে সহযোগিতা করছেন কৃষানীরা।
রায়পুর গ্রামের কলমি চাষিরা বলেন, প্রায় ১৪-১৫ বছর আগে ব্র্যাক, লাল তীর কোম্পানি এ দু’গ্রামের মাঠের মাটি পরীক্ষা করে কলমি চাষের উপযুক্ত মনে করেন। তারা চাষিদের কলমি চাষে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তারা অগ্রিম খরচ ও বীজ প্রদান করেন। আবাদ শেষে গ্রামে এসে কলমি বীজ কিনে নেন। এতে চাষি ভালো লাভ পান। এরপর থেকে প্রতি বছর এ মরসুমে এ দু’গ্রামের চাষিরা কলমি শাকের চাষ করে বীজ বিক্রি করেন। পরপর কয়েক বছর চাষিরা বিভিন্ন কোম্পানির নিকট বীজ বিক্রি করলেও এখন আর কোম্পানির অপেক্ষা না করে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট বীজ বিক্রি করে দেন। তিনি আরও বলেন, কলমি শাকের আবাদ ও বীজ বিক্রি করে এ দু’গ্রামের চাষিরা ভালো আছেন। এক কথায় চাষিরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
রায়পুর ও খন্দকারপাড়া গ্রামের কৃষকদের দেখাদেখি এ বছর মেহেরপুর সদর উপজেলার হিজুলী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম দেড় বিঘা জমিতে কলমি বীজের চাষ করেন। এছাড়া আরও কয়েকজন প্রায় ২০ বিঘা থেকে ২৫ বিঘা জমিতে কলমি চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, ভাদ্র মাসে পাট কেটে আশ্বিন মাসে কলমি চাষ করা হয়। প্রায় ৪ মাসের ফসল কলমি বীজ। পৌষ মাসের শেষের দিক থেকে বীজ কাটা-মাড়াই চলে। যারা দেরিতে চাষ করেছেন তারা মাঘ মাসে বীজ কাটা-মাড়াই করছেন। তিনি আরও জানালেন, কলমি শাক চাষ থেকে কাটা মাড়াই পর্যন্ত বীজ ক্রয়, চাষ, সেচ, সার-বিষ ও লেবার খরচ সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘা থেকে ৭ মন থেকে ৮ মন বীজ সংগ্রহ করা যায়। গত বছরে কৃষকরা ভালো দাম পেয়েছে। এছাড়াও গ্রেটিং অনুযায়ী কৃষক ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত মণ দরে কলমি শাকের বীজ বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, কলমি বীজ লাভজনক ফসল বিধায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঢেপা গ্রামের মাঠে এবছরও প্রচুর কলমি চাষ হয়েছে। মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান, মেহেরপুরের মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। ব্রাক, লাল তীরসহ বিভিন্ন কোম্পানি ইতঃপূর্বে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামের বিশেষ করে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ রায়পুর, খন্দকারপাড়া ও যাদবপুর গ্রামের চাষিদের কলমি বীজ উৎপাদানে উদ্বুদ্ধ করে এবং কৃষকদের উৎপাদিত বীজ উচ্চ দামে কিনে নেন। সেই থেকে কৃষকরা কলমি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এবং এ কলমি চাষ দিনে দিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রসারিত হচ্ছে।