ওবামা-ক্যামেরন ফোনালাপ : যেকোনো সময় সিরিয়ায় হামলা

স্টাফ রিপোর্টার: যে কোনো মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও এদের মিত্র দেশগুলো সিরিয়ায় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, হামলা হতে পারে আজই। অবশ্য কারও মতে হামলা চালানো হবে শুক্রবার রাতে। এজন্য প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। আর তা জায়েজ করতে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আবেদন করেছে যুক্তরাজ্য। বারাক ওবামা তো এর আগে থেকেই এ হামলার কথা বলে আসছিলেন। সে মোতাবেক হামলার ছকও তৈরি করেছে দেশটির যৌথবাহিনী। এরই মধ্যে ভূমধ্যসাগর, আরব সাগর ও লোহিত সাগরে যুদ্ধজাহাজ ও রণতরীসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সমাবেশও করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছিলো, যেকোনো সময় সিরিয়ায় হামলা চালানো হবে এবং দেশটির বিদ্রোহীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন মার্কিন কূটনীতিবিদ। এদিকে সিরিয়ায় হামলা চালাতে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটেন। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন টেলিফোনে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

2nd

মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, সীমিত পরিসরে এ হামলা চালানো হবে এবং তা তিন দিন ধরে চলবে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করার পরিবর্তে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে একটি বার্তা পাঠানো হবে এ হামলার মূল লক্ষ্য। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অজুহাতে দেশটিকে শায়েস্তা করার উদ্দেশে এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাসায়নিক হামলা চালানোর জন্য সিরিয়া সরকারকে দায়ী করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে ব্রিটেন। এ প্রস্তাবে বেসামরিক লোকদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার অনুমতি দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব যেন তারা পালন করতে পারে তার সুযোগ তিনি দিতে চান। ক্যামেরন এ পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে গতকাল ব্রিটিশ সামরিক প্রধানদের নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠক করেছেন। এক সাক্ষাতকারে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্দেশ দিলেই সিরিয়ায় অভিযান চালানো হবে।

জাতিসংঘের যে অস্ত্র পরিদর্শকরা এখন সিরিয়ায় আছেন, তারা নিরাপত্তার কারণে একদিন কাজ বন্ধ রাখার পর আবার শুরু করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, অস্ত্র পরিদর্শকদের অবশ্যই তাদের কাজ করার জন্য সময় দিতে হবে। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়াল্লেম বলেছেন, তার দেশ আক্রান্ত হলে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করে দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইংরেজি ভাষায় এক সাক্ষাত্কারে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, যেসব দেশ বলছে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তারা পারলে তাদের জনগণের কাছে প্রমাণ দেখাক। সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে এর মধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন, রাশিয়া ও ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ঘটনা প্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে তাতে হয়তো বিষয়টি শুধু সিরিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পুরো অঞ্চলকেই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে। এক খবরে বলা হয়, ইসরাইলের দিকেও এ হামলার আঁচ লাগতে পারে। ইসলামী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলো বলছে, তাদের নেতা এবং ট্রেনিং ক্যাম্পগুলোও মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে আক্রান্ত হতে পারে এবং এ জন্য তাদের লোকদের সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।

এক খবরে বলা হয়, ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ থেকে সিরিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হতে পারে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রর তোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এতো শক্তিশালী যে, সেটি কেবল ভবনকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাতে পারে না, জানালা লক্ষ্য করেও হামলা চালানোর ক্ষমতা আছে। নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে আমেরিকার ক্রুজ মিসাইল সমৃদ্ধ চারটি যুদ্ধজাহাজ স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলো- ইউএসএস ব্যারি, ইউএসএস মাহান, ইউএসএস রামেজ এবং ইউএসএস গ্রেভলি। এছাড়া ইউএসএস স্ট্রেইট অব জিব্রাল্টার ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করেছে। তবে এ রণতরী থেকে হামলা চালানো হবে না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রণতরীতে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।