এ সময় যে পাঁচ সবজি অবশ্যই খাবেন

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বর্ষা মরসুম চলছে। এ সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে নানা রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। শরীর কতটা সুস্থ থাকবে, তা এ সময় খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। তাই বর্ষা মরসুমে বাজার থেকে সঠিক সবজি বাছাই করে কেনা জরুরি। এ সময় বাজারে বেশ কিছু নতুন সবজি পাওয়া যায়। সেখান থেকে উপযোগী সবজি বেছে নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা পুষ্টিমান বিবেচনায় মরসুমি সবজি খেতে পরামর্শ দেন।

ভারতের পুষ্টিবিদ সিমরান সাইনির মতে, বর্ষার মরসুম ভালো। তবে এ সময় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজিতে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে বলে তা না কেনাই ভালো। এতে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। এ সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। কারণ, যেকোনো সময় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুষ্টিকর শাকসবজি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

বর্ষার সময় খাওয়ার উপযোগী কয়েকটি সবজি সম্পর্কে জেনে নিন: লাউ: বর্ষার সময় সেরা ও স্বাস্থ্যকর সবজি বিবেচনা করা হয় লাউকে। এতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় রূপে প্রচুর ডায়েটারি আঁশ থাকে। ফলে পরিপাক নালি ভালো থাকে। এছাড়া এতে আয়রন, ভিটামিন বি, সি থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে কার্যকরে সাহায্য করে। এছাড়া কম ক্যালরির খাবার হিসেবে পেট হালকা রাখে লাউ। লাউয়ে প্রচুর পানি থাকায় দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে এবং ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।

করলা: করলা তেতো হলেও অনেকের প্রিয় সবজি। ভাজি, ভর্তা আর ব্যঞ্জনে করলার কদর অনেক। মানবস্বাস্থ্যের জন্য এই সবজির উপকারী গুণও কম নয়। এটি ভিটামিন সি ভর্তি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি বর্ষার মরসুমে শরীর সুস্থ রাখতে দারুণ উপকারী। পুষ্টিবিদদের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই থাকে ১০০ হাত দূরে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজমপ্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। পানির সাথে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়। করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমে সহায়তা করে।

পটোল: বর্ষার মরসুমে শরীর সুস্থ রাখতে বেশি করে পটোল খেতে পারেন। বর্ষার মরসুমে সর্দি-জ্বর, কাশি, মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। পটোল খেলে এসব সমস্যা দূর হয়। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅ্যাক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ ও সি আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পটোলে ফাইবার থাকে, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। পটোলে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। তাই ওজন কমানোর জন্য নিশ্চিন্তে পটোলের তরকারি খেতে পারেন। এটি পেট ভরা রাখতে ও ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।

আলু: বর্ষার সময় আলু খাওয়া নিরাপদ। এতে ব্যাকটেরিয়া কম থাকে। গোল আলু ও মিষ্টি আলু উভয়ই খাওয়া যায়। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও প্রচুর আঁশ আছে। গোল আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। গোল আলু খুব দ্রুত হজম হয় যেকোনো বয়সের মানুষের।

কাঁকরোল: ক্যাকটাসের মতো রঙিন সবজি কাঁকরোলের নানা গুণ। প্রোটিন, আয়রন ও আঁশে ভরা সবজি এটি। বর্ষার মরসুমে পেট ঠিক রাখতে কাঁকরোল খুব ভালো সবজি। হজমপ্রক্রিয়া ঠিক রাখতে তাই এ সময় বেশি করে কাঁকরোল খেতে পারেন। কাঁকরোলে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া এতে কার্বোহাইড্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এনজাইম থাকে।

সতর্কতা: বর্ষার মরসুমে এসব সবজি কেনার পর অবশ্যই দু-তিনবার ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করতে হবে। এতে জীবাণু বা কোনো রাসায়নিক থাকলে তা দূর হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় যা খাবেন তা যেন অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়। তা না হলে বিপদ। এ সময় বাইরের খাবার বিশেষ করে ফুটপাতের ভাজাপোড়া যতটা পারেন কম খাবেন। তা না হলে পেটের পীড়ায় ভুগতে হতে পারে।