‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’

স্টাফ রিপোর্টার: সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ২ বছর পরও ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি। বিচার না পাওয়ায় হতাশ পরিবার, স্বজন ও গণমাধ্যমকর্মীরা। দীর্ঘ ২ বছরে বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিচারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি ঘটনা তদন্তের। মিলেনি কোনো ক্লু। এমন অবস্থায় নিহত দম্পতির পরিবার ও স্বজনরা দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজন করেছেন ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদের। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবির সাথে ক্ষোভ ও বিচারহীনতার প্রতিবাদ স্বরূপ ‘আসুন সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’- বলে তুলেছেন ভিন্ন এক স্লোগান। আর এ থিমকে সামনে রেখে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে আয়োজন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে সাগর-রুনি স্মরণে আয়োজিত চিত্র প্রদশর্নীর উদ্বোধন হয়। এটি উন্মোচন করেন- সাংবাদিক দম্পতি পরিবারের সদস্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ানা হাসান বলেন, আজ এতোদিন হয়ে গেলো সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। এ পরিবার কতো কষ্ট থেকে এখন কথাগুলো বলছে তা বোঝা দরকার। কারণ যারা হারিয়েছেন তারা বোঝেন যে কি তারা হারিয়েছেন। তবে তাদের দাবির মানে এই না যে, মৃত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেয়া বা সরকার বা রাষ্ট্র তা করতেও পারবে না। তবে দুটি কাজ রাষ্ট্রের করা উচিত তা হলো- শিশু মেঘের নিরাপত্তা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করা।

নারীনেত্রী খুশী কবির বলেন, আমরা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের আসল তদন্ত রিপোর্ট চাই। যারা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তাদের বিচার চাই। সাধারণ নাগরিক হিসেবে সাগর-রুনির বিচার চাই আমরা। সরকার এ বিচার নিয়ে অবহেলা করছে। এতে পার পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা। বিষয়টিকে অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা চলছে। চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। রুনির বড় খালা মমতাজ মহল মির্জা বলেন, আমাদের সন্তানকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। আজ আমার বোন মেয়ের শোকে অসুস্থ। যারা হারায় তারা বোঝে হারানোর কত কষ্ট। টেলিভিশনে এখন কোন সংবাদ দেখলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে রুনির মা। আর কতোদিন আমরা অপেক্ষা করবো? দুটি মানুষকে মেরে ফেললো আর এখনও আমরা এর বিচার পেলাম না। আমরা আর কিছু চাই না আসল অপরাধীর বিচার চাই। প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও তাদের শিশুসন্তানসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ছবি এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও পুলিশের নেয়া মেঘের জবানবন্দি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো গ্যালারি।
চিত্র প্রদর্শনীতে বোঝানো হয়েছে যারা অপরাধ করেছে তারা অপরাধী নয়। অপরাধী তারাই যারা স্বজন হারিয়েছেন। সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, কণ্ঠশিল্পী আসিফসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে সাগর-রুনির হত্যার রহস্য উন্মোচন ও প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আজকের মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সকল সদস্য, চুয়াডাঙ্গার সকল পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উন্মোচন হোক রহস্যের: এদিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দু বছর উপলক্ষে গতকাল দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি মামলা। এজন্য তদন্ত নিয়ে আমরা তাড়াহুড়া করছি না। তদন্তে সময় নেয়া হচ্ছে। দু বছর হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু সব মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় না। আমরা মামলাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।