আলমডাঙ্গায় পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ইট ভাটা স্থাপন আইন লঙ্ঘন করে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশেই একাধিক ইটভাটা : একটু বৃষ্টিতেই জনভোগান্তি চরমে

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় পরিবেশ সংরক্ষণ  এবং  ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন করে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশেই চলছে বেশ কিছু ইটভাটা। ফলে একটু বৃষ্টিতেই যাতায়াতকারীদের ভোগান্তির অন্ত নেই। বছরের পর বছর প্রচলিত ইটভাটা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হলেও ওই কয়েকটি ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে নেয়া হয় না কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা। ফলে  জনগণের ভোগান্তির বহর বেড়েই চলে।

জানা গেছে, গতকাল রোববার সকালের এক পশলা বৃষ্টি। বহু কাঙ্খিত বৃষ্টি। অথচ সেই কাঙ্খিত বৃষ্টিই আলমডাঙ্গার বেশ কয়েকটি গ্রামবাসীর জীবনে ভোগান্তি ডেকে এনেছে। আলমডাঙ্গা-ফরিদপুর সড়কের আলমডাঙ্গা পৌর এলাকাধীন এলজিইডি’র সড়কের কিনার ঘেঁষে অবস্থিত দুই দুটি ইটভাটা। এসবিএন ব্রিক্স ও আরএনবি ব্রিকস নামে দুটি পাশাপাশি ইটভাটা। আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কে যমুনা মাঠের জেএসবি ব্রিকস, বণ্ডবিল–মাদারহুদা সড়কে অবস্থিত এমএসবি ব্রিক্স। এ সকল ইটভাটার মাটি সড়কের কিনারের কিছু অংশ দখল করেই স্তুপীকৃত করে রাখা হয়েছে। সড়কের অধিকাংশজুড়ে মাটির স্তর। সারা বছরই এই ইটভাটাগুলো তাদের ইট তৈরির উপাদান মাটি বহনকারী লাটাহাম্বার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত সড়ক কাঁপিয়ে চলাচল করে। মাটিভর্তি লাটাহাম্বার সড়কগুলোতে চলাচলের ফলে প্রতিনিয়ত সড়কে মাটি পড়তে। পিচঢালা সড়কের উপরিভাগে তৈরি হয় মাটি আর ধুলোর স্তর। একটু বৃষ্টিতেই সড়কের উপরিভাগের এই মাটির স্তর গলে সর্বনেশে প্যাঁচপ্যাঁচে কাদায় পরিনত হয়। গতকাল সকালের বৃষ্টিতে সড়কের উপরের জমে থাকা এটেঁল মাটি কাদাতে সয়লাব হয়ে যায়। এদের মধ্যে বৃষ্টি শেষ হওয়ার সাথে সাথে সড়কের কাদা দ্রুত ধুয়ে ফেলে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে টিএনবি ও এমএসবি  ইটভাটা দুটি। বাকিগুলোতে দুপুর পর্যন্ত জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হয়। অনেক বাইসাইকেলচালককে সাইকেল কাঁধে তুলে নিয়ে কষ্টে সড়কে চলতে দেখা গেছে। অনেক মোটরসাইকেলচালক মোটরসাইকেল থেকে নেমে ধীরে ধীরে সতর্কতার সাথে কাদাময় সড়কে মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।  ফলে সড়কে যাতায়াতকারীদের চরমতম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া এমন পরিস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তার জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বণ্ডবিলের নিকট সঙ্ঘটিত চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের দুর্ঘটনায় নিহত ২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু। একই বৃষ্টিতে আলমডাঙ্গা-ফরিদপুর সড়কের কাদায় পিছলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মন্টু। এসময় তিনি রোডের ওপর ছিটকে পড়েন। এক হাত ভেঙে যায়। এমন আরও বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে।

অথচ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সড়ক দিয়ে ইটভাটার কাঁচামাল মাটি পরিবহন নিষিদ্ধ। এমনকি সে সড়ক ইউনিয়ন বা গ্রামীণ হলেও। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩’র ৫ ধারার ৪ উপধারায় স্পষ্টভাবে এ নিষিদ্ধকরণের বিষয়টি উল্লেখ আছে। মোবাইলকোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এ ধারা লঙ্ঘনের জন্য ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অথচ এ আইন প্রয়োগের নির্দেশনা থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। ফলে ইটভাটা কর্তৃপক্ষের পোয়াবারো। বাধ্য হয়েই ভোগান্তির নির্মম নিয়তি বরণ করে নিতে হয় সাধারণ মানুষকে।

একই আইনের ৮ ধারার ৩ নং উপধারার (চ) মতে, ইটভাটা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত সড়ক থেকে আঁধা কিলোমিটার দূরত্বে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া রেলপথ থেকে ইটভাটা ১ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করতে হবে। (৮ ধারার ৩ নং উপধারার (ঙ)। এ দুটি আইন লঙ্ঘনের শাস্তি অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত।

অথচ, ইট ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩’র ৮ ধারার ৩ উপধারার এই আইন দুটি প্রয়োগের দৃষ্টান্ত নেই। ফলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সড়ক কিংবা রেললাইন থেকে নির্দেশিত দূরত্ব বজায় না রেখেই আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শুধু আলমডাঙ্গার প্রশাসন না, জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয়রা নিয়োমিত চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়ক ধরেই যাতায়াত করেন। অথচ এই সড়কের কিনার ঘেঁষে একাধিক ইটভাটা।