আলমডাঙ্গার ডাউকিতে বাল্যবিয়ে ও যৌনহয়রানি প্রতিরোধসভায় জেলা প্রশাসক

 

উত্ত্যক্তকারী বখাটেদের কেউ পার পাবে না

ডাউকি প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন বলেছেন, বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি দোষী অভিভাবকদের বিরুদ্ধে যেমন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর, তেমনই যেসব কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে বাল্যবিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন, সে সকল সমস্যাও সমাজ থেকে সমূলে উৎপাটনে প্রশাসন বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রশাসন সমাজের সতেনমহলের সার্বিক সহযোগিতা পেলে বাল্যবিয়ের মতো অভিশাপ থেকে যেমন সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব, তেমনই রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্তকারী বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে হীনমানসিকতা দূর করা অসম্ভব নয়। প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন গতকাল সোমবার দুপুরে আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়ন পরিষদ মিলনতায়নে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বাল্যবিয়েতে কখনই সুফল মেলেনি, মেলে না। যাকে বাল্যবিয়ের আসনে বসতে বাধ্য করা হয়, সে অসহনীয় যন্ত্রণার মাঝে পড়ে। দাম্পত্যে সুখের বদলে কষ্টকর হয়ে ওঠে। জীবন সম্পর্কে বুঝে ওঠার আগেই বুড়িয়ে যায়। এজন্য অভিভাবকের অসচেতনতা যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী রাস্তাঘাটে ওঁত পেতে থাকা উত্ত্যক্তকারী বখাটেরা। এদের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের রাস্তায় উত্ত্যক্ত করার অপরাধে বেশ কয়েকজন বখাটে জেলহাজতেও রয়েছে। যারা এখনও সতর্ক হয়নি, তারাও রেহাই পাবে না।

বাল্যবিয়ে, যৌনহয়রানি-ইভটিজিং ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে মতবিনিময়সভায় সভাপাতিত্ব করেন ডাউকি ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এলাকার অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যেখানেই যৌনহয়রানিকারী তথা উত্ত্যক্তকারী বখাটে সেখানেই প্রতিরোধে পুলিশের সহযোগিতা নিতে হবে। প্রশাসন সব সময় সাধারণ মানুষের সাথে রয়েছে, থাকবে। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঞ্চালিত সভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আলাউদ্দিন আহম্মেদ, ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খবির উদ্দিন, বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমীর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, মাদবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান, সিআইজি সভাপতি রাহেন আলী, ইউপি সদস্য মুন্নাফ আলী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী, ডা. মতিয়ার রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জেল হোসেন, ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ, শফি উদ্দিন, খেদ আলী, ইলিয়াস হোসেন, চায়না খাতুন, হাসিনা খাতুন, রাবেয়া খাতুন, ভিডিবি দলনেতা ওয়ালিউর রহমান, ইউনুচ আলী প্রমুখ।

ডাউকি ইউনিয়ন পরিষদের সভার আগে জেলা প্রশাসক বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার বাদেমাজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষে জেলা প্রশাসককে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের সাথে ছিলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ইসলামসহ শিক্ষা বিভাগের উপজেলা কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করেন। শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তিনি কৌশলে শিক্ষার মানও যাচাই করে দেখেন। জেলা প্রশাসক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেক শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, আজকের শিশু আগামী দিনের অগ্রযাত্রার সূর্য সৈনিক। জাতির ভবিষ্যত।