আরও চার লাল-সবুজ ট্রেন নামছে ৪ সেপ্টেম্বর

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদ সামনে রেখে আরও চারটি লাল-সবুজ ট্রেন যোগ হচ্ছে রেলপথে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনা এ ট্রেনগুলো নামানো হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জানান, ৪ সেপ্টেম্বর ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনা লাল-সবুজ রঙের  নতুন বগিসহ চারটি ট্রেন নামানো হবে। পুরনো কোচগুলো দুটি ট্রেনে যুক্ত করে আসনসংখ্যা বাড়ানো হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, বগি (কোচ) সমস্যার সমাধানে লাল-সবুজ রঙের নতুন বগি দিয়ে আসন বাড়িয়ে নামানো হচ্ছে নতুন এ চারটি ট্রেন। এগুলো হলো ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমণি এক্সপ্রেস ও ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস। এসব ট্রেনের সাথে যুক্ত হবে নতুন কেনা বগিগুলো।। পাশাপাশি পুরোনো বগিগুলো ঢাকা-দিনাজপুর রুটের দ্রুতযান একতা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে যুক্ত হবে। নতুন-পুরান কোচ দিয়ে এ দুটি ট্রেন চালু হলে সংশ্লিষ্ট রুটে আসনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এতে আসন সংকট অনেকটা কেটে যাবে।

সূত্র আরও জানায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণের (এলওসি) আওতায় বগিগুলো সরবরাহ করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা রাইটস লিমিটেড। এতে ব্যয় হচ্ছে ৯৭৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ভারত। আর ২৬৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০টি মিটার গেজ ও ৫০টি ব্রড গেজ আনা হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বগিগুলো কেনার জন্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি করা হয়। এরই মধ্যে ৬৯টি বগি ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও ২১টি বগি পথে রয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ইন্দোনেশিয়ার তৈরি বগি দিয়ে ২৫ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সোনার বাংলা নামে নতুন একটি ট্রেন চালু করা হয়। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা সেতু উদ্বোধনের পরে ২০০৩ সালে প্রথম রেলপথে ঢাকার সাথে খুলনার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট চালু হয় সুন্দরবন এক্সপ্রেস নামের ঢাকা-খুলনা আন্তঃনগর ট্রেন। এরপর ২০০৭ সালের ৭ অক্টোবর চালু হয় চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা পেরিয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় ট্রেনটি যেতে ও আসতে সময় নেবে ১০ ঘণ্টা। তাই ভারত থেকে কেনা নতুন ব্রড গেজ বগি দিয়ে ট্রেনটি নতুন করে চালু করা হবে। ট্রেনটিতে আগে আসন ছিলো ৪৭৪টি। নতুন কোচ যুক্ত হওয়ায় তা বেড়ে হবে ৮৮২টি। এ ছাড়া ট্রেনটিতে চারটি বগিতে এসি সিট থাকবে ৯৬টি। এসি চেয়ার সিট থাকবে ১৫৬টি। আর সাধারণ ছয়টি কোচের প্রতিটিতে ১০৫টি হিসেবে সাধারণ আসনসংখ্যা হবে ৬৩০টি। যখন ঢাকা থেকে আসবে তখন হবে ৮৩৪টি আসনের। ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাতে আসে বলে এসি সিটগুলো এসি বাথ হয়ে সিট সংখ্যা কমে যায়। গতকাল ট্রেনটির ১২টি ব্রডগেজ বগি নিয়ে ৫৩৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে চিত্রা নামের ট্রেনটি। যাত্রীবাহী ১০ বগি ও দুই মাথায় দুটি পাওয়ার কার- এই ১২টি কোচ নিয়ে ট্রেনটি নতুনরূপে যাত্রা করবে।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, পুরনো বগি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় খুলনায় গেছে চিত্রা এক্সপ্রেস। দুই দিন পর গতকাল ঢাকায় ফিরেছে ভারত থেকে আনা নতুন বগিসহ সম্পূর্ণ নতুনরূপে। ট্রেনটিতে আগে যাত্রীবাহী বগি ছিলো আটটি। এখন দুটি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসি কোচ আগে ছিলো দুটি, এখন আরও দুটি যুক্ত হয়ে মোট চারটি করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই রেলের বহরে যোগ হচ্ছে বিলাসবহুল আরও ২৭০টি বগি। বাংলাদেশের পতাকার সাথে মিল রেখে স্টেইনলেস স্টিলের বগিগুলোর রং নির্ধারণ করা হয়েছে লাল-সবুজ। ২৭০টি বগির মধ্যে ১৫০টি আনা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ও ১২০টি ভারত থেকে। মিটার গেজের জন্য ১০০ ও ব্রডগেজের জন্য আরও ৫০টি বগি আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। ভারত থেকে আনা ১২০টি বগির সবই ব্রড গেজ। এরই মধ্যে ভারত থেকে ৬০টি বগি আনা হয়েছে। বাকি ৬০টি বগি এ বছরের মধ্যে চলে আসবে। ভারতের পাঞ্জাবের কাপুরথালা কারখানায় তৈরি হচ্ছে বগিগুলো। অস্ট্রিয়ান টেকনোলজিতে তৈরি বিলাসবহুল এ বগিগুলো লিঙ্ক হোপম্যান বুশ (এলএইচবি) ব্র্যান্ডের। ১২০টি কোচের মধ্যে রয়েছে ১৭টি প্রস্তুত শ্রেণির শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার বগি। ১৭টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার বগি। ভাড়ার ঘর বা প্যান্ট্রি সংযুক্ত ৩৪টি সাধারণ চেয়ার বগি। নামাজ পড়ার স্থানসহ ৩৩টি সাধারণ চেয়ার বগি ও ১৯টি পাওয়ার কার বগি রয়েছে।