আমাদের ছেড়ে বড় অভিমান করে চলে গেলেন হারেজ স্যার

 

স্টাফ রিপোর্টার: মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আপদ মস্তক শিক্ষকতার মহান ব্রত নিয়ে শির উঁচু করে চলতেন আমাদের সবার প্রিয় হারেজ স্যার। গত শুক্রবার রাত ৮টায় সেই শির চিরদিনের জন্য নত করে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচলিয়া গ্রামের নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে…….রাজেউন)। ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ২ কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে নিজের দানকৃত জমিতে নির্মাণাধীন মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। মরহুমের জানাজায় আত্মীয়, শুভানুধ্যায়ী ভক্তসহ বিপুল সংখ্যক গুণগ্রাহী উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি এসএসসি পাস করার পর ঢাকা ফিজিক্যাল কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করে মুন্সিগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পরে আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঘোষবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পারদখলপুর কেবি একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণাকুণ্ডু পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণাকুণ্ডু প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও তিনি যোগ্যতার সাথে ক্রীড়া ও ইংরেজি স্পোকিং বিষয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে হরিণাকুণ্ডু লালন শাহ কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে তিনি ক্রীড়া বিভাগে যোগদান করে বেশ কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ক্রীড়ার সাথে সাথে ইংরেজি স্পোকিং বিষয়টিও যথাযথ গুরুত্বের সাথে ছেলে মেয়েদের কাছে তুলে ধরেন। কর্ম জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধত্ব বরণ করেন। কিন্তু  দৃষ্টিহীনতা তার মহান কর্মযজ্ঞ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এসময় তিনি Tense In English, Frist Learning in English,  ছোটদের ইংরেজি অভিধান, ছড়া ছন্দে বাংলা, ইংরেজি আরবী শেখাসহ প্রায় অর্ধ ডজন বই সংকলন ও প্রকাশ করেন। এসকল বই রচনাকালে তিনি তার স্নেহভাজন ছাত্র, কখনোবা সুপ্রিয় বন্ধু সহকর্মীদের কাছে গিয়ে এই মহৎ কাজটি সম্পন্ন করেন। তিনি হরিণাকিুণ্ডু দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকালে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া চটকাবাড়িয়া জামে মক্তবসহ নিজ বাড়িতেও প্রাক প্রাথমিক শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা দান অব্যাহত রাখেন। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে আনন্দঘন পরিবেশে পাঠ দানের জন্য ব্যক্তিগত অর্থয়ানে বাঁশ, কাঠ, রড ও রশি দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দোলনা তৈরি করে দেন। সকল শ্রেণির এবং বয়সী মানুষের কাছে তিনি হারেজ স্যার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।