আন্দোলনে ভূমিকা রাখলেই বিএনপির মনোনয়ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: তদবির বা মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে যারা বিএনপির প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। বাঁকা পথে নয়, এবার আসন্ন আন্দোলনে ভূমিকা রাখার ওপর নির্ভর করবে দলটির মনোনয়ন। ২৫ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপি সর্বাত্মক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান বিরোধীদল। আন্দোলন সফল করতে যেসব নেতা কার্যকরি ভূমিকা রাখবেন তারাই পাবেন বিএনপির মনোনয়ন। বিএনপির হাইকমান্ড ঘনিষ্ঠ সূত্রে একথা জানা গেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২৪ অক্টোবরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা দেয়ার পরপরই সংবাদ সম্মেলন বা বিবৃতির মাধ্যমে সেই সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের একটা কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এরপর ঢাকার সমাবেশ থেকে দেয়া হবে কঠোর আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি। এ আন্দোলনে যারা সক্রিয় থাকবেন তাদের বিষয়টি মনোনয়ন দেয়ার সময় বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে। এ জন্যই নেতাদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরে বসে থেকে এবার আর মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। নামতে হবে আন্দোলনের মাঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। এছাড়া মনোনয়ন নিশ্চিত করতে অনেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লন্ডনে দৌড়ঝাঁপও করছেন। অনেকে চেয়ারপারসনের আস্থাভাজন প্রভাবশালী নেতাদের কাছে তদবির করছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করার এ বাঁকা পথের বিষয়টি এরই মধ্যে চেয়ারপারসন অবগত হয়েছেন। এরপরই তিনি কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বলেছেন, কোনো বাঁকা পথে এবার আর কাজ হবে না। ফলে গুলশান কার্যালয়ে ও লন্ডনে দৌড়ঝাঁপ করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। অনেকে রাজপথে পরীক্ষা দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর মতো একটি আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে পারেনি বিএনপি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর এ ইস্যুতে বিএনপি সে সময় টানা কয়েকটি হরতাল দিয়ে সরকারকে কিছুটা নাড়া দেয়। কিন্তু মে মাসের শুরুতে হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। আর গ্রেফতার এড়াতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতা পালিয়ে গেলে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পরে। এরপর সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর মতো আর কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি বিএনপিকে। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে হরতালের কর্মসূচিগুলো সফল করতে রাজপথে নামেনি কোনো নেতা। ঘরে বসেই তারা সময় কাটিয়েছেন। এবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকার একতরফা নির্বাচনে সফল হলে বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আন্দোলন করতে নেতাদের রাজপথে নামিয়ে আনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য এবার তিনি আন্দোলনের সাথে মনোনয়ন প্রাপ্তির শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

সূত্রমতে, আন্দোলনে কারা কীভাবে ভূমিকা রাখছে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই তা মনিটরিং করবেন। শুধু বিএনপিরই নয়, ১৮ দলীয় জোটের অনেক নামসর্বস্ব দলের নেতা শুধু দলের বিবেচনায় মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন চাইলে তাদের আন্দোলনের মাঠে সক্রিয়তা দেখাতে হবে। কোনো ত্যাগ স্বীকার না করে এবার ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার সুযোগ না দেয়ার ঘোর বিরোধী বিএনপি হাইকমান্ড।

সূত্রমতে এখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি বা বড় শোডাউন পছন্দ করছেন না দলের হাইকমান্ড। খুলনা সফরে তিনি নেতাকর্মীদের পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন নয়, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে। এছাড়া নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, যতো বড় নেতাই হোন না কেন, এবারের আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা না রাখলে আগামীতে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। আন্দোলন কর্মসূচি পালনে ভূমিকার ওপরই প্রত্যেককে প্রকৃত মূল্যায়ন করা হবে। মনোনয়ন পেতে হলে যার যার অবস্থান থেকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। এমনকি তাদের দলীয় কোনো পদেও না রাখার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া নতুন করে কেউ ষড়যন্ত্র ও বেঈমানি করলে তাদের আর ক্ষমা না করার কথাও জানিয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বিএনপির পর আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এমন ধারণা জন্মেছে নেতাদের মধ্যে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে হটানো না গেলে বিএনপি যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না এটা নিশ্চিত। তাই তাদের হটাতে হলে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নামতে হবে রাজপথে। নেতারা এই বিষয়টি উপলব্ধি না করলে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। তাই চেয়ারপারসন নেতাদের রাজপথে নামাতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ত্যাগী, সৎ এবং সুযোগ্য ব্যক্তিরাই বিএনপির সমর্থন পেয়ে থাকে। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। আন্দোলন সফল ও সংগঠন শক্তিশালী করতে যেসব নেতা ভূমিকা রেখেছেন নিশ্চয়ই দল তাদের সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করবে।