আনন্দ বেদনায় প্রতিমা বিসর্জন : শেষ হলো শারদীয় দুর্গোত্সব

স্টাফ রিপোর্টার: আনন্দ-বেদনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বিদায় দেয়া হলো দুর্গতিনাশিনী দুর্গাকে। এর মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো এবারের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজা।

আগামী বছর ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ভক্তরা সজল চোখে বিদায় দিয়েছেন মা দুর্গাকে। ঢাকের বাদ্যের সাথে নাচ, সিঁদুর উত্সব আর ধান- দুর্বা ও মিষ্টি-আবির দিয়ে দেবীকে বিদায় জানানোর পালা শুরু হয় সকাল থেকেই। মহালয়ায় দেবীপক্ষের শুরুতে যাকে আবাহন করা হয় দশমীতে সেই দেবী দুর্গাকে বিদায় দেয়া হয়। দেবী দুর্গা এবার হাতির পিঠে চড়ে বিদায় নিচ্ছেন। শাস্ত্র মতে, এতে দেশ হবে ফল-ফুল-শস্যে পরিপূর্ণ। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, অসুরশক্তি বিনাশিনী দেবীর পূজায় সকল অপশক্তি পরাভব মানে। পাঁচ দিনব্যাপি দুর্গোত্সবের শেষ দিনে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের আগে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘোরানো হয়। এর মধ্যদিয়ে যেন নতুন করে উৎসবের আমেজ ফুটে ওঠে।

উৎসব, বিষাদ আর নানা রকম আয়োজনের মধ্যদিয়ে সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গায় পালিত হয়েছে বিজয়া দশমী। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে দুর্গা প্রতিমা এনে স্থানীয় টাউন ফুটবল মাঠে জড়ো করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকের শব্দে এ সময় পুরো শহর মেতে ওঠে। এ মাঠ থেকে একে একে দেবী বিসর্জন দেয়া হয় মাথাভাঙ্গাসহ অন্য নদীতে। এবার জেলায় ৯৬টি পূজা মণ্ডপের আয়োজন করা হয় দুর্গাপূজার।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ এলাকায় সকল স্থানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। সকলের বুকে ছিলো বিসর্জনের বেদনা। প্রতিধ্বনিত হয় মা তুমি আবার এসো।

উল্লেখ্য, এবার সরোজগঞ্জ এলাকায় ৯টি পূজামণ্ডপ তৈরি হয়। নজিরবিহীন পুলিশি প্রহরার মাধ্যমে পূজাঅর্চনা সম্পন্ন হয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বোয়ালিয়া, কুতুবপুর, সিন্দুরিয়া ও আলিয়ারপুরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নবগঙ্গা নদীতে। সরোজগঞ্জ কাচারিপাড়া, গড়াইটুপি পালপাড়া, গড়াইটুপি মাঝেরপাড়া ও তেঘরির প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় চিত্রা নদীতে এবং লক্ষ্মীপুরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় ভাটই নদীতে।

মোমিনপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের ৩টি প্রতিমা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী খুদিয়াখালী মাথাভাঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়। শারদীয় দুর্গাপূজার দশমীতে নীলমণিগঞ্জ-মোমিনপুর, বোয়ালমারী এবং সরিষাডাঙ্গা পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে সব এলাকার প্রতিমা নিয়ে আসার পর অসংখ্য নারী-পুরুষের পদচারণায় এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত পরশু রাতে নীলমণিগঞ্জ-মোমিনপুর পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণে আলোচনাসভা ও ধর্মীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উত্তম কুমার দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মোমিনপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান নিপুল, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মহাদেব কুমার পাল, সেক্রেটারি অজয় কুমার শাহা। অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান ফারুক সঙ্গীত পরিবেশন করে এবং মঞ্চ নাটকে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, হিন্দু ধর্মালম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। রিমঝিম বৃষ্টির মধ্যে গতকাল সোমবার এ উপজেলার ১৮টি মণ্ডপের দেবতার মূর্তি নিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীরা ট্রাকযোগে বের হয়। ঢাকের তাল আর বিদায়ী আরতির মধ্যদিয়ে দেবীদুর্গাকে ভৈরব নদে বিসর্জন দেয়া হয়।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় প্রশাসনের কড়ানজরদারির মধ্যদিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ হোসেন উপজেলার ২০টি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি বলে তিনি মাথাভাঙ্গা প্রতিবেদককে জানান।

মেহেরপুর অফিস/গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর জেলার ৩৪টি মণ্ডপে নির্মিত প্রতিমাগুলো গতকাল বিসর্জন দেয়া হয়েছে। ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা নদীসহ বিভিন্ন স্থানে চোখের জলে দেবীদূর্গাকে বিদায় জানিয়েছে হাজারো ভক্ত। এর আগে প্রতিমাগুলো খোলা যানে করে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। রং মাখামাখির মধ্যদিয়ে আনন্দ উৎসব করে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাংনী পৌরসভার পুরাতন ভবন সংলগ্ন মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে শোভাযাত্রা করা হয়। পরে অসংখ্য নারী-পুরুষভক্ত হাটবোয়ালিয়া বাজার সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে যায়। সেখানে আতসবাজি ও রং খেলার মধ্যে আনন্দে মেতে ওঠেন ভক্তরা। পরে প্রতিমাগুলো মাথাভাঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় করেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মাথাভাঙ্গা নদীতে দর্শনা কেরুজ, হরিজন সম্প্রদায়, পুরাতন বাজার, রামনগর দাসপাড়া, কালিদাসপুর আদিবাসিপাড়া, পারকৃষ্ণপুর হালদার, চণ্ডিপুর হালদারপাড়া, কুড়ুলগাছি হালদারপাড়া, কার্পাসডাঙ্গা আদিবাসীপাড়া, জয়রামপুর দাসপাড়া ও ডুগডুগি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।