আজ যুবদল নেতা বল্টুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

বিচারের বাণী নরবে নিভৃতে কাঁদছে

 

এক বছরেও যুবদল নেতা বল্টু হত্যামামলার এক আসামিও হয়নি গ্রেফতার

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল হাই বল্টুর আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। হত্যাকাণ্ডের এক বছর অতিবাহিত হলেও এক আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়নি। হাইকোর্ট থেকে আসামিরা জামিন নিয়ে আবার অনেকে জামিন না হয়েই প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বছর ঘুরে আজ আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বল্টু হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এক বছর আগে আজকের মতো ২৭ অক্টোবর ঈদুল আজহার পূর্বরাতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল হাই বল্টুকে। তার হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তির এ দিনে নতুন করে বল্টুর রেডিয়ামের মতো জ্বলজ্বলে স্মৃতি আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী এমনকি আপামর আলমডাঙ্গাবাসীকে বেদনায় বিধূর করে তুলেছে। তার একমাত্র ছোট্ট শিশুকন্যার অনন্ত পথ চাওয়ার করুণ আকুতি বেদনার সাগরে হাবুডুবু খাবে। পরিবারের সদস্যদের হৃদয় নতুন করে বেদনায় মোচড় দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠবে। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে।

আলমডাঙ্গার মিয়াপাড়া সংলগ্ন ক্যানেলপাড়ার আব্দুল বারির বড় ছেলে আব্দুল হাই বল্টু পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। বল্টু ছিলেন অত্যান্ত সদালিপি ও হাস্যোজ্জ্বল যুবক। বল্টু গত ২৭ অক্টোবর অর্থাৎ গত বছর ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। বের হওয়ার আগে ৫ বছরের একমাত্র মেয়ে বর্ষা মেহেদী কিনে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেছিলো। ওই দিন ঈদের বাজার করারও পর্যাপ্ত টাকা ছিলো না বল্টুর কাছে। ছোট-খাটো ব্যবসায়ী বল্টু পুরো বেলা ঘুরে সন্ধ্যায় টাকা যোগাড় করেন। এরপর তিনি ঈদের জন্য সামান্য কেনা-কাটা ও মেয়ের জন্য মেহেদী কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজি মোড়ে পৌঁছুতেই আওয়ামী লীগ মদদপুষ্ট দুর্বৃত্তরা বল্টুকে তাড়া করে। জীবন বাঁচাতে সে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে একটি বন্ধ গলি পথে ঢুকে পড়ে। সামনে বেরনোর আর রাস্তা না থাকায় সন্ত্রাসীরা বল্টুকে রামদা, চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। ওই নির্মম দৃশ্য অনেকেই দেখেছে তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে যায়নি বাধা দিতে। সন্ত্রাসীরা মহড়া দিতে দিতে চলে গেলে প্রতিবেশীরা বল্টুকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইউনাইটেড ও পরে একতা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে প্রয়োজন হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নেয়ার। ওই রাতে কোনো মাইক্রোবাস যোগাড় করতে না পেরে হায়দার আলী টিটির মালবাহী ছোট পিকআপভ্যানে বল্টুকে নেয়া হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। তার অবস্থার আরও অবনতি হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ইন্সেন্টিভ কেয়ার ইউনিট খালী না থাকায় মুমূষু অবস্থায় ফকিরাপুলের ব্রাইটন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ক্লিনিকেই পরদিন শনিবার অর্থাৎ ঈদের দিন বেলা ৩টার দিকে বল্টু মারা যান। বল্টুর পিতা ওই ঘটনায় বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মালেক। মামলার প্রায় ৭ মাসেও এক আসামিকে গ্রেফতার না করায় বল্টুর পরিবারের সাথে সাথে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। সে সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলুর সাথে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। তারা তদন্তের খোঁজখবর নেন ও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) তাদের বলেছিলেন, ‘সরি, আমি ব্যর্থ।’ তার কিছুদিন পর বল্টু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের ওই মামলা প্রসঙ্গে কথা উঠলে আব্দুল মালেক বলেন, ‘ওটা তো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড দেশে কতোই ঘটে। এনিয়ে এতো কথা কিসের?’

ইতোমধ্যে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক বছর অতিক্রম হতে চলেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাও বদল হয়েছেন। এখনও অবধি এক আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়নি। মোট ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৪ জন হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। ১ নং আসামিসহ ৪ জন জামিন না হয়েই প্রকাশ্যে ঘুরাঘুরি করছে বলে তার পরিবার জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলু গতকাল জানান, সন্ধ্যায় তিনি ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলামসহ ৭/৮ জন নেতাকর্মী বল্টু হত্যা মামলা নিয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ করেছেন। তিনি আসামিদের গ্রেফতার করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

সচেতনমহলের ধারণা, আলমডাঙ্গা অঞ্চলের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এটি। এ আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে কিংবা আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে এ ঘটনার জের আলমডাঙ্গার রাজনীতির জন্য বুমেরাং হতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে সহিংস রাজনীতির কালো অধ্যায়।