অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা : চোরাচালান ও মাদক রোধে হিমশিম খাচ্ছে বিজিবি

দামুড়হুদার বিভিন্ন সীমান্তের শূন্য রেখায় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে করা হয়েছে কলা বাগান

 

দর্শনা অফিস: ভারত বাংলাদেশের শূন্য রেখায় ভারতীয় কৃষকরা করেছে কলা বাগান। যার কারণে নিমতলাসহ বিভিন্ন সীমান্তে অহরহ ঘটছে দুঘটনা। চোরাচালানীদের ঠেকাতে রিতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বিজিবি সদস্যদের। বিজিবি-বিএসএফ’র উচ্চ পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে সীমান্ত বর্তী জমিগুলোতে খাটো আবাদের দাবি বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা নিরসন হয়নি আজও। যে কারণে বিএসএফ’র হাতে বারবার প্রাণ দিতে হয়েছে বাংলাদেশি কৃষকদের। সম্প্রতি-বিজিবি-বিএসএফ’র ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি, সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব ও ঘনঘন সৌজনমূলক বৈঠকের কারণে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা কমেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দর্শনা নিমতলা সীমান্তের ৭৩ নং মেন পিলার থেকে ৭৬ নং মেন পিলার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ভারত ও বাংলাদেশের শূন্য রেখায় ভারতীয় কৃষকরা করেছে বিশাল আকারে কলা বাগানের চাষ। শুধু এ সীমান্তেই নয় এখন দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তের শূন্য রেখায় এ ধরনের কলাচাষ করেছে ভারতের কৃষকরা।

সূত্র বলেছে, আন্তর্জাতিক আইনে দু দেশের মধ্যে ১শ ৫০ গজ করে ৩শ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা, অথবা দু দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে। অথচ দর্শনা নিমতলা সীমান্তের প্রায় ৪ কিলোমিটারসহ দামুড়হুদার বিভিন্ন সীমান্তের বিপরিতে ভারতের শূন্য রেখায় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের কৃষকরা কলা বাগান করে আসছে। ইদানিং তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইন লংঘন বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করেছে। যার ফলে ওই সীমান্ত পথ চোরাচালানীদের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিণত হয়েছে।

একদিকে ভারতের বিএসএফ’র সহযোগিতায় অবাধে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসছে মারণ নেশা হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা ও লাগেজ মালামালসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক দ্রব্য। অন্যদিকে সীমান্ত রক্ষায় খানেকটা হিমসিম খেতে হচ্ছে বিজিবিকে। চোরাচালানের ফলে প্রকৃত চোরাচালানীরা প্রাণে রক্ষা পেলেও বিএসএফ’র গুলির বলি হতে হয়েছে বাংলাদেশের অনেক নিরীহ কৃষককে। সীমান্তে কলাচাষ করার কারণে বিজিবি টহল দলকে পড়তে হচ্ছে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন। অনেক সময় কলাবাগানে ওৎ পেতে থাকা চোরাচালানীদের হামলা শিকার হতে হচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিকে।

সূত্র বলেছে, বিজিবি’র জনবল কম থাকাসহ সীমান্তে চলাচলে অনুপোযোগী রাস্তা ও কোনো প্রকার যানবাহন না থাকায় মাঠ-ঘাটে পায়ে হেটে টহল দিতে হয় তাদের। যার ফলে চোরাচালানীরা খুব সহজেই পৌঁছে যায় তাদের নিরাপদ গন্তব্যে। কলা বাগানের কারণেই চোরাচালানীরা বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে অব্যাহতভাবে চোরাচালান কারবার করছে। সব মিলিয়ে দর্শনা নিমতলাসহ দামুড়হুদার বিভিন্ন সীমান্তের প্রধান সমস্যার একমাত্র কারণ হিসেবে দেখা গেছে শূন্য রেখায় বিশাল কলা বাগান। এদিকে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের জমিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাটো আবাদের চাষ করছে। এলাকাবাসী মনে করে সীমান্তে কোনো প্রকার কলাবাগান না থাকলে একদিকে যেমন অবাধ চোরাচালান রোধ সম্ভব হবে, অন্য দিকে বিঘ্নিত হবে না দু’ দেশের নিরাপত্তা। আর বিএসএফ’র গুলিতে প্রাণ দিতে হবে না কোনো নিরীহ বাংলাদেশি কৃষককে। সীমান্তের চলমান এ সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সুদৃষ্টি দিয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জোর দাবি তুলেছে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামবাসী ও সচেতন মহল। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক লে. কর্নেল আমির মজিদ বলেছেন, ৬ ব্যাটলিয়নের ১১৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় তিনি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন খাটো আবাদের জন্য। ফলে সীমান্ত ঘেষা বাংলাদেশি জমিগুলো খাটো আবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র কলা বাগান চাষ বন্ধ করণের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হলে তার সুফল হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কোনো কোনো সীমান্ত ঘেঁষা জমি থেকে কেটে ফেলা হয়েছে কলা বাগান। তবে অচিরেই সীমান্ত ঘেঁষা জমিতে কলাচাষ বন্ধ হতে পারে।