অধীনস্থ না

 

স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এক হাত নিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তাফা কামাল। বাজেট বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে পরিকল্পনা কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আ.হ.ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নিয়ে অর্থমন্ত্রীর দেয়া চিঠির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ সমালোচনা করেন। কিছুদিন ধরেই সংশোধিত বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা নিয়ে এই দুই মন্ত্রীর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। ওই চিঠিতে বাস্তবতা অনুধাবন করে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করায় পরিকল্পনামন্ত্রীর সহযোগিতা চান অর্থমন্ত্রী। এ সম্পর্কে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘উনি (অর্থমন্ত্রী) আমাকে অনুধাবন করতে বলেছেন। আমি তো উনার সহকর্মী, অধীনস্থ না। উনি (অর্থমন্ত্রী) প্রতিবছর বিশাল বাজেট দেন। হাজার হাজার কথা বলেন। অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেন না। বাজেট বক্তব্য দিতে দিতে শুয়ে পড়েন। আমি হলে ১৫ পাতায় বাজেট শেষ করে দিতাম।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘ওনার বয়স হয়েছে। অনেক ভুল-ভাল বলেন। আমরা মাফ করে দিই।’ আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘উনি কি যেন একটা বানিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রতিবছর দুই/তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এটা (পিপিপি) কি গরু, না ছাগল, তা-ও মানুষ বুঝে না।’ অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘কয়েক দিন আগে উনি বললেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। উনি তো নিজেই বিশ্বব্যাংকের পেনশন নেন। আপনারা কি বিশ্বাস করেন, উনি মামলা করবেন? তবে আমি উনার বিরুদ্ধে না।’

দু মন্ত্রীর মতবিরোধ: চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার নিয়ে নিয়ে দু মাস ধরেই অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত বাজেটের আকার ৫৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন তা মানতে রাজি হয়নি। সংশোধিত এডিপির জন্য ৬০ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা চায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এই নিয়ে দুই মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।

এমন অবস্থায় ২০ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পরিকল্পনামন্ত্রীকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, আরও এক হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ৫৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রথম ছয় মাসের এডিপি বাস্তবায়ন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যথেষ্ট নিম্নমানের। প্রকল্প সাহায্যের ব্যবহারও তেমন আশানুরূপ নয়। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে সম্ভাব্য ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা। এসব বিবেচনায় সংশোধিত এডিপির আকার কীভাবে কমানো যায়, সেদিকেই বিশেষ নজর দিতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী চিঠিতে আরও বলেন, ‘আবার এই বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য পুনর্বিবেচনা যথাযথ হবে না। অতিসত্বর সংশোধিত বাজেটের বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার বাস্তবতা অনুধাবন ও সহযোগিতা আশা করছি।’

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে পরিকল্পনা কমিশনের তদারকিতে বা আওতাধীন ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার এডিপি নেয়া হয়েছে।