অক্টোবরে আ.লীগের প্রার্থী তালিকা , বাছাইয়ে চমক

মাথাভাঙ্গা অনলাইন :  দশম জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে চমক আনতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রার্থী বেছে নেয়ায় নতুন মুখ প্রাধান্য পাবে। আর মনোনয়ন প্রত্যাশী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের আমলনামা ভালো নয়, মনোনয়ন দৌড়ে তারা থাকছেন ঝুঁকির মুখে বলে জানিয়েছেন দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হোসাইন তৌফিক ইমাম। এদিকে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরের মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে এগিয়ে থাকতে চায় দলটি।
তিনি জানান, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেশ কজন মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর কর্মকা-ে বেকায়দায় পড়ে মহাজোট সরকার। কজন সংসদ সদস্যদের বিতর্কিত কাজে সরকারের পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে দলও।
মাঠপর্যায়ে অনেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে দলীয় নেতাদের মধ্যে। তাই, আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও অনেকেই এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তৃণমূল নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামা সংগ্রহ করছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এইচ টি ইমাম জানান, একক নয়, জোটগতভাবেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তিনি জানান, বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল রেখেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা যায় কিনা সে ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায়।
তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, বর্তমান সংসদ এবং মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই আগামী নির্বাচনের কথা বলে সরকার সমঝোতার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন জোটের শরিক বাম দলগুলোও নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল রাখার বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, বর্তমান সংবিধানেই সংসদ ভেঙে দেয়ার বিকল্প উপায় রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল রাখা না রাখার প্রশ্ন আবারো আলোচনায় এসেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনকালে সংসদ অধিবেশন বসবে না। মুলতবি থাকবে অর্থাৎ সংসদ নিস্ক্রিয় থাকবে। সংসদ সদস্যরা কোনো ভাতা বা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর মতোই তাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ বহাল রেখেই আগামী নির্বাচন করার বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার অবস্থানেই আওয়ামী লীগ অটল থাকবে। সে অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উপায় খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের অবস্থান নিয়ে সরকার আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক রাশেদ খান মেনন বলেছেন, এ ব্যাপারে তাদের আপত্তি রয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময়ে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথাও তুলেছিলেন। ফলে এখনো আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেছেন, সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়টিও সংবিধানে রয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানে দুটি বিকল্পের কথা বলা আছে। প্রথমটা হচ্ছে, সংসদ পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে এবং এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।
দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু আগে সরকারি দল সংসদ ভেঙে দেবে এবং সংসদ ভেঙে দেয়ার পরে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পূর্ণ মেয়াদের বিষয়টি অর্থাৎ প্রথম উপায়টি সংসদীয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। কারণ সংসদ বহাল রেখে নির্বচন করার বিষয়টি আসে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায়।
তবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য হচ্ছে, সংসদ বহাল রেখে সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী আচরণ বিধি এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ সংশ্লিষ্ট বিধিতে ব্যবস্থা করা হবে। আর সেজন্য সরকার সব দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় ।