াসরকারি অ্যাম্বুলেন্সযোগে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ এবং

তখন খাটিয়াই ছিলো গ্রামবাংলার রোগী বহনের বাহন। এখন? শুধু অ্যাম্বুলেন্সই নয়, শ্যালোইঞ্জিনচালিত হরেক নামের যান যেমন গ্রামবাংলায় ভুরিভুরি, তেমনই টাকা থাকলে সেলফোনের বদৌলতে হেলিকপ্টার তলবও সহজ। সবই বিজ্ঞান ও বিবর্তনের সুফল। প্রবাহমান মহাকাল শুধু বিজ্ঞানের সুবাতাসই বয়ে আনেনি, মানুষের মানসিকতায়ও ঘটিয়েছে পরিবর্তন। এরপরও যখন আমাদের সমাজের কোনো শিক্ষিত অর্থশালী কিংবা চকচকে নামিদামি পোশাক পরা মানুষগু রোগী বহনের বাহনে চেপে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে বের হন, তখন সঙ্গত প্রশ্ন বিবেকবানদের নিশ্চয় ক্ষতবিক্ষত করে। অর্থ না হয় সকলের বিবেক জাগাতে পারে না, শিক্ষাও ওদের কি অতোটুকু দায়িত্বশীল করতে পারেনি?
ঈদের পরদিন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ৮/৯ জন চকচকে পোশাক পরে উৎসবের আমেজে মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি ও মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করার দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন সাংবাদিক সচেতনমহল। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ফোনে মৌখিকভাবে জানানো হয়। ছবি তুলে ফেসবুকেও দেন অনেকে। সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সযোগে ভ্রমণের সচিত্র তথ্য ফেসবুকে পড়ে বহু মানুষ বিরূপ মন্তব্য করেন। মন্তব্যগুলো কে কার কতোটুকু সুধরে দায়িত্বশীল করতে পেরেছে, কতোটুকু পারেনি সেটা অবশ্য ভাববার বিষয়। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত দল গঠন করে দিয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স চালককে কারণ দর্শনানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স চালককে রক্ষার্থে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক শিশু রোগীকে মুজিবনগরের হাসপতালে রেফার দেখানো হয়েছে। তদন্তে নিশ্চয় তদন্তকর্তাদের বিচক্ষণতায় প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। যদিও এমন আশা করাও এখন অনেক ক্ষেত্রেই অবান্তর।
কিছুদিন আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার এক সন্তানের বিয়ের কাজে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের সচিত্র প্রতিবেদন পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। তদন্তও হয়। বিয়ের আনুষ্ঠান থেকে বর-কনেকে কর্মকর্তার বাড়িতে নেয়ার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরা হয়। তাতে দায় এড়ানো গেলেও যে নবদম্পতিকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার মধ্যদিয়ে যে হীনমানসিকতার পরিচয় মেলে সেটাই মূলত প্রধান আলোচ্য হয়ে রয়েছে। সেই ঘটনার পর এবার ঘটলো সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ। যারা ওই বাহনের সওয়ার হয়ে ঘুরেছেন ঈদের পরদিন তাদের ওই রোগী শোয়ার ট্রলি বা খাটিয়াতে বসতে কি একটুও খারাপ লাগেনি? জাগ্রত হোক ওদের বিবেক, উপলব্ধি বোধ।