স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারটুকুও ধুলুণ্ঠিত

আমজনতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কে? দেশের হিংসাত্মক রাজনীতি। যে সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার কতোটুকু? যারা আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের গ্রহণযোগ্যতাই বা কোথায় গিয়ে ঠেকছে? দেশের বৃহৎ দুটি দলের নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ পক্ষে যুক্তি আওড়ালেও ক্ষুধার্তের কাছে ওসব বাঁচালতা ছাড়া আর কি কিছু? যুক্তি নয়, সাধারণ মানুষ চায় শান্তি।

আর কতোদিন অবরোধ, হরতাল? কতোটা মানুষ মরলে সরকার তার দায় ঘাড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে? জবাব মিলছে না বলেই ব্যবসায়ীরাও নেমেছেন রাস্তায়। ঢাকা এফবিসিসিআই’র আহ্বানে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা শাদা পতাকা নিয়ে সড়কে অবস্থান করেছেন। তারা উভয় দলকে সমঝোতার ভিত্তিতে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তারা তাদের ব্যবসার করুণ হালও তুলে ধরে বলেছেন, ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঋণের কিস্তি দেবো কীভাবে? অবরোধ-হরতাল মানবো না, কিন্তু নিরাপত্তা কোথায়? নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। তা ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার তো কারো দয়া নয়, অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করতে না পারাটা অবশ্যই ব্যর্থতা। একের পর এক মানুষ মরছে। বাস-ট্রাক টেম্পুতে ককটেল পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। পুলিশের গুলিতেও মৃত্যু মিছিল প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। আর কতোটা মায়ের বুক খালি হলে, কতোজন বোন বিধবা হলে বন্ধ হবে হিংসাত্মক রাজনীতি? নেতা-নেত্রীরা সম্প্রীতির পথে হাঁটবেন?

যে রাজনীতি উন্নয়নের বদলে হিংসা ছড়ায়। মানুষের রক্ত ঝরায়। মায়ের বুক খালি করে, বোনকে করে বিধবা। পিতাকে বহন করতে হয় সন্তানের লাশ। সেই রাজনীতি নিশ্চয় দেশের সাধারণ মানুষ চায় না। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছে, তাদের দাবি দাওয়ার কথা বলেছে। সাধারণ মানুষ ওভাবে সংগঠিত নন। তবে ভালো-মন্দ বোঝেন। তাদের বিচারের রায় দিতে চান ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। সেই সুযোগটাই শুধু অধরা নয়, স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারটুকুও ধুলুণ্ঠিত।