সীমান্তে নির্বিচারে একের পর এক হত্যা এবং আমরা

 

ভারত সীমান্তরক্ষীদের নৃশংসতা বন্ধ হয়নি, হবে বলেও আশা নেই। কারণ বহুবার বহুভাবেই দু দেশের সীমান্তরক্ষীদের শীর্ষ কর্তারাসহ রাজনৈতিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সীমান্তে মানুষ হত্যা হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি মিলেছে। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। অথচ প্রতিবেশী দেশের সাথে মধুর সম্পর্ক বলেই শীর্ষ পদস্থরা দাবি করেন।

অবশ্যই দেশের সীমান্ত প্রহরীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। গুলি করে মানুষ মারবেন কেন? ভারতীয় সীমান্তরক্ষী কর্তাদের ভাষ্য, ভারত সীমান্তে সবসময়ই জরুরি বিধি জারি থাকে। দুষ্কৃতী ভেবেই গুলি ছোড়া হয়। মারা যাওয়ার পর দেখা যায় সে গরুব্যবসায়ী, গরু পাচার করার জন্যই সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিলো। পক্ষান্তরে গরু পাচারের জন্য সীমান্তে গিয়ে নির্মম মৃত্যুর শিকারটি পূর্ণাঙ্গভাবে অস্বীকারও করা যায় না।

দেশে গোমাংসের চাহিদা প্রচুর। তা মেটাতেই গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয় না। পাচার করে আনার পর গরু-মোষ প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করলেই তার বৈধতা দেয়া হয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, গরু-মোষ পাচারের অজুহাতে বা সুযোগে অনেকেই মাদক, বোমা তৈরির বারুদ, আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করে আনে। এরও যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। কতোদিন গরুর চাহিদা থাকবে কতোদিন এভাবে মরতে হবে? গত পরশু রাতেও মুজিবনগরের সোনাপুর সীমান্তে একজনকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে হয়েছে।

চোরাচালান বিশ্বজুড়েই নানাভাবে কম-বেশি হয়। বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লে চোরাচালান বৃদ্ধি পায়। কখনোই চোরাচালান দেশের জন্য কল্যাণকর হয় না। যদিও দেশে গোমাংসের চাহিদা পূরণে গরু পাচারকে অঘোষিতভাবে লাভ বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এরপরও কি চোরাচালানকে সমর্থন করা যায়? অবশ্যই না। দেশে গোমাংসের চাহিদা পূরণের বিকল্প পথ খুঁজতে না পারলে সীমান্তে পশু-পাখির মতো মানুষের প্রাণহানি বাড়তেই থাকবে। একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও কি ধুলণ্ঠিত হচ্ছে না?

সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যাকে অনমনীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। গবাদি পশু পালনে উৎসাহ জোগাতে দেশের পশুসম্পদ বিভাগকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। একের পর এক মানুষ মেরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের উল্লাস আমাদের শুধু শোকার্তই করে না চরমভাবে লজ্জা দেয়।