সার্ক নিয়ে স্বপ্ন এবং বৈরি সম্পর্কের আঁচ

সম্পাদকীয়

 

স্বপ্ন ছিলো সার্ক হয়ে উঠবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটা ঐক্যবদ্ধ সফল প্রতিষ্ঠান। সে স্বপ্ন ক্রমশ ফেকাসে হয়ে উঠেছে। কাশ্মীর নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট পাক-ভারতকে শুধু উত্তপ্তই করেনি, তার আঁচে পুড়ছে সার্ক। যুদ্ধের দামামা।

সাতটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সার্ক পরে আফগানিস্তান সংযুক্ত হয়ে আট জাতির সংস্থায় পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্কের আওতায় কমপক্ষে পঁচিশটি চুক্তি এবং শতাধিক ঘোষণা হলেও এসবের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, বাণিজ্য বাড়াতে সাপটা ও সাফটার মতো চুক্তি করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃবাণিজ্য বেড়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক আট শতাংশ। অথচ আসিয়ানের ক্ষেত্রে এই হার পঁচিশ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ষাট শতাংশের বেশি। বহু আগেই সার্ক ফুড ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু এখনও তা অনুমোদন করেনি। ২০০২ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা থাকলেও তা থেকে গেছে অধরাই। এমনিতেই সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার চেয়ে বৈরিতার দিকটিই বেশি লক্ষণীয়।

সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা; দারিদ্র্য দূরীকরণসহ অধিকাংশ লক্ষ্য পূরণেই ব্যর্থ হয়েছে সার্ক। অথচ এসব জাতীয় ও আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবেলায় সার্কের শক্তিশালী ভূমিকা থাকতে পারতো। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরে ভারতের হামলার পর পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার বিষয় বটে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধসমূহ মোকাবেলার ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পরষ্পর সহযোগিতা থাকা বাঞ্চনীয়। বাস্তবে তার উল্টো। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও আফগানিস্তান আগামী ৯ ও ১০ নম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে অংশ নিতে অসম্মতি জানিয়েছে। নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা নিশ্চুপ। তাই দৃশ্যত ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারছে না।

সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ছয়বার নানা কারণে তা স্থগিত হয়েছে। তবে এবারের কারণটি ভিন্ন। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। সকলকে সম্প্রীতির পথে হাঁটাই শ্রেয়।