সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত অবশ্যই মজবুত করতে হবে

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মন্দির-প্রতিমা ভাঙার রেশ কাটতে না কাটতেই চরম নিন্দনীয় যুগপৎ প্রশ্ন-ঘৃণা ও উদ্বেগের ঘটনা আবার ঘটেছে। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও এবং মন্দির দখলের চেষ্টা চালানো হয় নওগাঁওয়েও। একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার যখন দেশকে সবদিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সন্ত্রাসসহ যেকোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড রোধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তখন এসব ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছে এবং এর পেছনে কি উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে এসব প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে যারা বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তারা যে অধিক শক্তিমান এবং সংঘবদ্ধ তা আর নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না। দ্বিতীয় দফায় যে ঘটনা সেখানে ঘটলো এরপর সঙ্গতই সংখ্যালঘু শ্রেণির মানুষজন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নাসিরনগরের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো বর্বরোচিত ঘটনা এবং এর প্রায় কাছাকাছি সময়ে আরও কয়েকটি জেলায় মন্দির ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, প্রতিমা ভাঙার ঘটনাগুলোর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তাও প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাসিরনগরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার পর এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সদস্যরা সতর্কাবস্থায় থাকার পরও দুর্বৃত্তরা যেভাবে দুর্বৃত্তপনা চালিয়েছে তা মোটেও সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এর আগে নাসিরনগরে সংঘটিত ঘটনায় সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনায় ঠাঁই পায়। আমাদের ললাটে বিষয়গুলো লজ্জা ও কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, নাসিরনগরের এমপি এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী পূর্বের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করায় বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এসব ঘটনার দ্রুত তদন্তক্রমে যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিত করা জরুরি। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত কিছু সংখ্যককে গ্রেফতার করা হলেও দুর্বৃত্তদের শিকড় যে অনেক গভীরে প্রোথিত বিদ্যমান বাস্তবতা এরও সাক্ষ্যবহন করছে। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জেও। পূর্বের ঘটনার পাঁচদিন পর স্থানীয় এমপি এবং মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনদের অভয়বাণী শুনিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা না পেরুতেই নাসিরনগরে জ্বলে উঠলো দাউ দাউ আগুন। আমরা নাসিরনগরসহ দেশের অন্যত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর-লুটপাটের চরম নিন্দা জানাই এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর তাগিদ দেই। যারা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত-অনভিপ্রেত ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি জানাই সমবেদনা। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর দণ্ড নিশ্চিত করা হোক। হাত দেয়া হোক উৎসে। স্থানীয় প্রশাসন এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত অবশ্যই মজবুত করতে হবে। হীনস্বার্থবাদী যে বা যারাই হোক তাদের শিকড় উৎপাটন করতেই হবে। যে যুবকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে তার দাবি- অন্য কেউ তার ফেসবুকে ঢুকে এই স্ট্যাটাস দিয়েছে। ফলে কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক বিরোধ উসকে দিতে চাইছে কি-না তাও খতিয়ে দেখতে হবে দ্রুত। এমন ঘটনার উসকানিদাতাসহ পরিকল্পনাকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দ্রুত এসব ঘটনার দৃষ্টান্তযোগ্য শাস্তি চাই এবং এর মধ্যেই রয়েছে উপযুক্ত প্রতিবিধান।