সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা

 

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এক্ষেত্রে যেমন জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি, তেমনিভাবে সবার সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের দায় দায়িত্বও অনেক বেশি। সরকার দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে যখন নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করছে, এ রকম অবস্থায় যদি সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার উদাসীনতার চিত্র পরিলক্ষিত হয়, তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলেই আমরা মনে করি। যদি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উদাসীন হয়, তবে তথ্য বিভ্রাট দেখা দেবে, আর তথ্য বিভ্রাট দেখা দিলে পরিস্থিতি নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা কঠিন হবে। বলাইবাহুল্য যে, অকাল বন্যায় হাওরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সাথে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ দুর্গতির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। সারাদেশের মানুষের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশা ও দুর্ভোগ নিয়ে উৎকণ্ঠাও বিরাজমান। কিন্তু এর চেয়ে পরিতাপের আর কী হতে পারে, যখন জানা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপক বিপর্যস্ত সময়ের মধ্যদিয়ে যেতে হলেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেত্রকোনার শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতার চিত্র ধরা পড়েছে সরকারি এক সভায়!

তথ্য মতে, সোমবার রাতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী, নেত্রকোনার চার সংসদ সদস্য ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। সভায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদাসীন ও দায়সারা বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিরাও। আমরা মনে করি, সেসব কর্মকর্তার উদাসীনতার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে, তাদের বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, সভার শুরুতে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক জানান, তার জেলায় এক লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া নেত্রকোনায় আবাদ হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৬৯ হাজার ৭১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে এক হাজার ১৮০ টন মাছ। এরপর যখন বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডিসির সুপারিশ উপস্থাপনের পর সভা সঞ্চালনার দায়িত্ব নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব- তখন কৃষি কর্মকর্তার কাছে সচিব জানতে চান, কী করলে হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের জীবনযাত্রা দ্রুত সহজ করা যাবে। উত্তরে এই সরকারি কর্মকর্তা এলোমেলো বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এছাড়া মৎস্য কর্মকর্তা তথ্যের উপস্থাপনে গরমিল ধরা পড়ে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বক্তব্যও সন্তোষজনক ছিলো না বলে জানা যায়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তা দুর্গত সব উপজেলায় গেছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনটি উপজেলায় গেছেন বললেও, সভাকক্ষে বসা অনেকেই এ সময় বলে ওঠেন- যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই জেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের এই উদাসীনতায় বিরক্তি প্রকাশ করেন মন্ত্রীসহ অন্যরা। আমরা মনে করি, যখন একটা সরকারি সভায় এমন কঠিন সময়েও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ধরা পড়ে, তখন তা অত্যন্ত নেতিবাচক। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হয়।

সর্বোপরি আমরা সরকারকে বলতে চাই, বিভিন্ন সময়েই কিছু কিছু কর্মকর্তার কার্যক্রম যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে, তেমনি উদাসীনতা থেকে শুরু করে নানা ধরনের নেতিবাচক অভিযোগও ওঠে। ফলে আমরা মনে করি এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কোনো কর্মকর্তাই যদি উদাসীন হয়, তবে যেকোনো সংকট মোকাবেলা করা কঠিন হবে। হাওর এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে, পরিস্থিতি নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক।