সমাজে অবশ্যই আলোকিত মানুষের অভাব রয়েছে

 

শুধু কবিরাজ সেজে নয়, মন্ত্র তন্ত্রের ওপর ভর করে অনেকেই ওঝা সেজে প্রকাশ্যেই প্রতারণার ফাঁদ পেতে দেদারছে ব্যবসা করছে। অন্ধ বিশ্বাসে ওইসব প্রতারকচক্রের অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সমাজেরই সরলসোজা মানুষ। অবশ্য সচেতনতার আলো ছড়ানোর সাথে সাথে ওই ধরনের প্রতারণার আস্তানা বহুলাংশেই গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। হচ্ছে। অবশিষ্ট যা আছে তা কুসংস্কারের ওপর ভর করেই রয়েছে। যে সমাজে এ ধরনের প্রতারণার আস্তানা ও ফাঁদ রয়েছে সে এলাকায় যে সচেতন মানুষ নেই তাও নয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তা না হলে ওঝা কবিরাজ চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিচ্ছে কীভাবে?

 

শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে গোপন রোগ নিরাময়ের কথা বলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়। পত্র-পত্রিকায় দেদারছে তারা বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে। এসব প্রচারণায় পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হন। গোপন রোগ নিরাময়ের আশায় ওইসব ঠিকানায় গিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হারালেও প্রতারিতরা লজ্জায় তা প্রকাশ করেন না। ফলে সহজেই পার পেয়ে যায় গোপন রোগ নিরাময়ের প্রতিশ্রুতিতে অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্র। এসবের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে কথিত কবিরাজ চক্র। এরা ‘গাছে মার দুনিয়ার বাইর’ স্লোগান তুলে সর্বরোগ নিরাময়ে পারদর্শী সেজে দেদারছে প্রতারণা করেন। কথার ফুলঝুরিতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হলেও শেষ পর্যন্ত বোকামি প্রকাশ পাবে ভেবে কারো কাছে নালিশ করেন না, হয় না সালিসও। আর জিনভর করা নারী? এ ধরনের প্রতারক পূর্বে বেশি ছিলো। অনেকটা পাড়ায় পাড়ায় সপ্তার নিদৃষ্ট দিনে ‘বার’ তথা জিনভরা করা কামেয়াব নারীর সন্ধান মিলতো। পাড়া মহল্লায় সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে ওই ধরনের নারীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এখনও যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি তা চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়ার রেখা বেগমের দিনভর নাটক দেখে নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। ওই নারী গ্রামেরই এক কিশোরকে সুস্থ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে গত বৃহস্পতিবার দিনভর নাটক করেন। নাটক করেও জিন হাসিলের চূড়ান্ত অভিনয়টি তিনি করতে না পেরে ওই কিশোরের চিকিৎসার নামে দীর্ঘ ৬/৭ মাস ধরে অপচিকিৎসা দেয়া কথিত কবিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ওই কবিরাজ মসলেম আলী বান মেরেছে বলেই তো জিন হাজির হলো না। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের সমাজে সচেতন মানুষের অভাব না থাকলেও আলোকিত মানুষের অভাব রয়েছে। যে মানুষ সচেতনতার আলো ছড়িয়ে সমাজ থেকে কুস্কার বিতাড়িত করবে।

 

হয়ারে ‘বান’ হায়রে ‘বার’! সচেতন মানুসের ওপর ওরা বান মারতে পারে না, বান কাজে লাগে না। সচেতন মানুষের সামনে বার’র নাটক সফল হয় না। সফল করতে পারে না। নানাভাবে এটা পরীক্ষিত। এরপরও কল্পিত গল্পের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আস্তানা গড়ে ওঠার খবর হতাশ তো করবেই। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়েছে। ক্ষুদ্রাকৃতির মস্তিষ্কা আবিস্কারে সফলতা মেলার পর এখন স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শরীরের বিভিন্ন অংশ একে একে অসাড় হয়ে যাওয়া রোগেরও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশার বাণী শোনাচ্ছে। আর তখন আমাদের দেশে জিন হাসিল করে চিকিৎসার নামে নাটক করা হচ্ছে। দৃশ্য দেখে দীর্ঘশ্বাসতো বাড়বেই।