সমাজের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখে চলে গেলো অর্না

গলা ব্যথার সাথে গা গরম। এ আর এমনকি? শিশু কিশোর কিশোরীদের তো ওরকম কতোই হয়। এরপরও শিক্ষক পিতা-মাতা মোটেই বিলম্ব করেননি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রীর গলার ব্যথা যখন বেড়েছে, তখন তাকে নেয়া হয়েছে চিকিৎসকের কাছে। না, হাতুড়ে নয়। রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকই দিয়েছেন চিকিৎসা। অবস্থার যখন উন্নতি হয়নি, তখন নেয়া হয়েছে অন্য এক চিকিৎসকের নিকট। তিনিও চিকিৎসা দিয়েছেন। সুস্থতার বদলে অসুস্থার মাত্রা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। গা ব্যথা থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেয়ার মধ্যে কেটেছে মাত্র ৫টা দিন। ৬ দিনের দিন সকালে চিকিৎসক বললেন দ্রুত নিতে হবে ঢাকায়। বললেই কি সব হয়? ঢাকা তো আর বাড়ির কাছে নয়। প্রস্তুতি নেয়ার কিছুক্ষণের মাথায় সমাজের সামনে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে অর্না চলে গেলো না ফেরা প্রান্তে।
মানুষের জীবনে সন্তানের মৃত্যু সহ্য করার মতো কষ্ট বোধ হয় আর নেই। সচেতন পিতা-মাতার কিশোরী কন্যাকে চিকিৎসকের নিকট যথাসময়ের নেয়ার পরও যখন মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত তখন যদি শোনে, দেরি হয়ে গেছে তখন দায়টা কার ওপর বর্তায়? যে চিকিৎসক প্রথমে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন তারা বুঝতে না পারার অজুহাতে দায় এড়ালেও চুয়াডাঙ্গার পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই যে অপ্রতুল তা নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না সমাজপতিরা। মশার শহর চুয়াডাঙ্গায় মেডিসিন কনসালটেন্টের অভাব অস্বীকার করার জো নেই। সময়ের  স্রোতে ভেসে আসা রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকদের কারো কারো মধ্যে ধারণায় যে ঘাটতি রয়েছে সেটাও অর্নার মৃত্যুর পর অস্বীকার করবেন কীভাবে? অর্নাকে হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হয়েছে কিংবা চুয়াডাঙ্গায় রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্তে ভুল হলে সেটা চিকিৎসকের হয়েছে। অর্নার পিতা-মাতা তো আর অবহেলা করেননি। অথচ অপূরণীয় ক্ষতি অর্নার মা-বাবারই হলো। সন্তানের মৃত্যুর পর কি কোনো মা বাবা সান্ত¦না খুঁজে পান? তবুও শোক সহ্য করতেই হয়, সয়ে নিয়েই চলতে হয় শোকার্তদের। অর্না চলে গেছে। ফিরবে না। আর যেন কোনো অর্নাকে এভাবে চলে যেতে না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পারাটাই সমাজের দায়িত্বশীলদের এখন অত্যাবশ্য করণীয় হওয়া উচিত। সুচিকিৎসার নিশ্চয়তার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিসহ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
চুয়াডাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত শিশু হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ভালো মানের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রেরও অভাব ঘোচাতে উৎসাহিত হননি তেমন কোনো বিনিয়োগকারী। রোগ শনাক্তকরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। দিন গড়ানোর সাথে সাথে অসুখ-বিসুখও আসছে যেন ছদ্মবেশে। ফলে চিকিৎসকদেরও বেশি বেশি করে দায়িত্বশীল হতে হবে। নতুন নতুন রোগ এবং তার চিকিৎসা সম্পর্কে সজাগ হতে না পারলে রোগীর অপমৃত্যু যেমন অনিবার্য, তেমনই সুস্থ করতে কিংবা যথাসময়ে সঠিক পরামর্শ দিতে না পারার মনকষ্টের বোঝা বাড়তেই থাকবে। চুয়াডাঙ্গায় উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা দরকার। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান বাড়াতে দূর করতে হবে সকল অপ্রতুলতা। চিকিৎসাসেবা চাওয়া তো আর কারো দয়া নেয়া নয়, এটা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।