সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সাথে একান্তে কিছুক্ষণ -আহাদ আলী মোল্লা

 

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি সৈয়দ শামসুল হক চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে গেলেন মুজিবনগরে। গত বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে জাপানি একটি টিমের সাথে মাইক্রোবাসযোগে সেখানে যান তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কবি ময়নুল হাসানের কাছে ফোন দিয়ে কবি জানিয়েছিলেন আমি একা নই, এ কারণে চুয়াডাঙ্গায় নামতে পারছি না তুমি বরং কাল শুক্রবার মুজিবনগরে এসো দেখা হলে ভালো লাগবে। শ্রদ্ধাভাজন ময়নুল হাসান আর আমি শুক্রবার সকাল ১০টায় মোটরসাইকেলযোগে রওনা দিলাম সেখানে। দামুড়হুদা-কার্পাসডাঙ্গা হয়ে মুজিবনগরে যখন পৌঁছুলাম ঘড়ির কাঁটায় বেলা সোয়া ১১টা। দেখা হলো দৈনিক মাথাভাঙ্গার মুজিবনগর প্রতিনিধি সফি উদ্দিনের সাথে। তিনি মুজিবনগরের বিশেষ বিশেষ কয়েকটি স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে আমার আর ময়নুল হাসান ভাইয়ের ছবি তুলে দিলেন। কিছুক্ষণ পর স্মৃতি ফলক থেকে গেলাম বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র স্থাপনার কাছে। সেখানে চোখে পড়লো সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক জাপানি টিমের সাথে কাজ করছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিতব্য একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র চিত্রায়ণের জন্যই কবির আগমন মুজিবনগরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এ প্রামাণ্যচিত্রের নির্দেশনায় রয়েছেন কবি নিজে। জাপানি কলাকুশলীরা দিনভর চিত্রায়ণের কাজ করছেন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে কবির ডাক পড়লো জেলা পরিষদের ডাকবাংলো সূর্যোদয়ের নিকটবর্তী গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউসে। ওখানেই আছেন কবি। আমি আর ময়নুল হাসান ভাই সেখানে যেতেই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন তিনি। আপেল, আঙ্গুর, বিস্কুট আর মেহেরপুরের বিখ্যাত সাবিত্রী। সাথে চা। চললো ফটোসেশন। বিখ্যাত কবি সৈয়দ শামসুল হককে একান্তে পাওয়া খুব দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি একান্তে হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত আলাপ করলেন আমাদের সাথে। খোঁজ নিলেন ময়নুল হাসানের লেখালেখি ও তার পরিবার সম্পর্কে। এ সময় ময়নুল হাসান তার এবারের একুশের বইমেলায় প্রকাশিত কাব্যগন্থ ‘যদি ভালোবাসা দাও কবির হাতে তুলে দিলেন। কবি এ সময় দুপুরের খাবারের জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু পাশের গ্রামে আমাদের দাওয়াত থাকায় কবির সাথে খাওয়া হলো না।

দেশবরেণ্য কবি সৈয়দ শামসুল হকের বয়স আশির কোঠায় গেলেও তিনি ভেঙে পড়েননি। এখনো কর্মচঞ্চল। প্যান্ট আর গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় তাকে দেখে বোঝাই যায় না তার বয়স হয়েছে। শুধু পোশাকেই তিনি তরুণ নন, মনের দিক দিয়েও তিনি চির সবুজ, কাজেও চঞ্চল। তাকে খুব কাছ থেকে দেখে অনুপ্রেরণা জাগে, যেমন আমার মধ্যেও জেগেছে। কবির সাথে প্রায় আধাঘণ্টা কাটানোর পর বিদায় নেয়ার সময় তিনি বারবার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন আমাদের হাতের দিকে। কয়েকবার হ্যান্ডশেক করলেন আমাদের সাথে। কবি ময়নুল হাসান আর আমার উদ্দেশে তিনি বললেন- কারো সহযোগিতা নয়, লিখে যাও, শুধু লিখে যাও। তোমার লেখাই একদিন তোমাকে জায়গা করে দেবে এ দেশের সব পাঠকের মনে।

 

জনতার একস্লিপ

তোমাদের পলাশীর যুদ্ধ হবে না

আ.শু. বাঙালী

ব্যান্ড-বঙ্গ গীটার কঙ্গো আর বুকটা ফাইট্যা যায় এর তোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে জীবন ঘনিষ্ঠ গান, যা এখন নির্বাসিত প্রায়। ঠিক যেমনভাবে নির্বাসিত হয়েছে গণমানুষের কল্যাণমুখী রাজনীতির নীতি, এমনই একটা হারিয়ে যাওয়ার গানের কথা বারবার মনে পড়ছে- ভুল সব-ই ভুল, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা- সে ভুল, এই গানটির সুরেই শুধু বাক্যের হেরফের ঘটিয়ে একটা গান হয়তো একদিন এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের গাইতে হবে। এমন কি হয়তো একদিন একাত্তরের লড়াকু মুক্তিযোদ্ধারা কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইবেন ভুল সবই ভুল, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যা লেখা সে ভুল। কিংবা একদিন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা সমস্বরে গেয়ে উঠবেন- আওয়ামী লীগ যা বলে তা ভুল। আওয়ামী লীগের কথায় বার্তায় যা বলে তা ভুল, অনাগত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য এই গানের কথাগুলো বলতে বা লিখতে হলো এই জন্য যে, আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের লাখো মানুষ সেনাবাহিনীর প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য যখন উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে ঠিক তখনই এলো একটি মন ভাঙা হৃদয় ভাঙা সেই মর্মান্তিক খবর, লাখো কণ্ঠের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যয়ভার তথা খরচ মেটানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি এই  সেই দলের সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, জঙ্গিবাদীর অর্থ জোগানদার জামায়াতের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। আর এই তিন কোটি টাকার চেকটি গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সুযোগ্য (?) কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ধরনী দ্বিধা হও)। অবশ্য ইসলামী ব্যাংকের দেয়া তিন কোটি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল দু মন্ত্রী দু রকম কথা বলেছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিতকারী সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চসহ দেশের তাবৎ প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন। তথ্যমন্ত্রী বিষয়টি নাচক করলেও গোপন করেননি রাম রাজনীতির নামাবলী গায়ে চাপানো তথ্যমন্ত্রী। পাপ কোনোদিন গোপন করেননি পাপ নাক গা ফুঁড়ে বের হয়। ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যমে দেশবাসীও দেখেছে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী আর মুক্তিযুদ্ধের নামাবলী গায়ে দেয়া অতীত এবং বর্তমান আমলা জ্বালানি মন্ত্রী মহোদয়ের কেমন বিগলিত হাসি দেয় ইসলাম ব্যাংকের পিআরডি’র ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তফা আনোয়ারের হাত থেকে কিভাবে তিন কোটি টাকার চেকটি গ্রহণ করছেন। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের সময় রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাংক, জঙ্গিদের অর্থের জোগান দাতা ইসলামী ব্যাংককে ঢাকার রাস্তার আলোকসজ্জাসহ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে স্পন্সর করার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। এগুলো ধর্তব্য না নিলেও লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আয়োজনে জামাতি ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে যে কথাটি জনমানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, তারা জনগণ্য যতোই আন্দোলন-দাবি-দাওয় করুন না কেন, আদালাত যতই নির্দেশনা দিক না কেন জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী ব্যাংক কোনোটাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করবে না। বস্ত্রশিল্প বাজার, কুটির ষড়যন্ত্র জ্ঞাত নবাবের সেই গুপ্তচরের ভাষারই প্রতিধ্বনি করে বলতে হয়, ওগো তোমরাকে কোথায়, আছো তোমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী শুনে নাও তোমাদের পলাশীর যুদ্ধ (জামায়াত এবং ইসলামী ব্যাংক) নিষিদ্ধ হবে না