সন্তানের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব অভিভাবকেরই

 

অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে বসানো মানে নিজের হাতে মেয়েকে নরকে ঠেলে দেয়া। এরপরও অনেক অভিভাবকই আছেন যারা ওরকম পাত্র আর পাবেন না ভেবে বাল্যকালেই বিয়ের আসনে বসাতে মেতে ওঠেন। তাছাড়া উত্ত্যক্তসহ নানা সমস্যা থেকে মেয়েকে রক্ষা করতেও বাল্যবিয়ের মতো সর্বনাশা আয়োজন করেন কেউ কেউ। এরপর যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো অফিসার নিজেই কন্যাকে বাল্যবিয়ের আসনে বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে, তখন সচেতন সমাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হন বটে।

বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই প্রশাসনের হস্তক্ষেপও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরই মাঝে দর্শনা পুলিশি তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানের মেয়ের বিয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়ে উঠেছে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মেয়েকে বিয়ের আসনে বাসাচ্ছেন পুলিশ অফিসার। এ অভিযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা লোকমোর্চা নেতৃবৃন্দ সরেজমিন তদন্ত করেন। মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। যদিও এসআই মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আগে মেয়ে মাদরাসায় পড়েছে। বয়স ১৮ বছর হলেও মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। এ যুক্তির গ্রহণযোগত্যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন অফিসার তার মেয়েকে বাল্যবিয়ের আসনে বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ উত্থাপনকে অবশ্যই খাটো করে দেখা যায় না। পুলিশের একজন সাবইন্সপেক্টরকে তো আর  অসচেতন বলা যায় না? তিনি তার মেয়ের যে জন্মসনদ সংগ্রহ করেছেন তা হিসেব করলে অবশ্য ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। এখন পর্যন্ত জন্মসনদ উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই যেমন সংগ্রহ করা যায়, তেমনই জন্মসনদ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগও ভুরিভুরি। ফলে অভিযোগ এবং অভিযোগ খণ্ডনের যুক্তির কোনোটিকেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। কারণ অভিযুক্ত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আইনের মানুষ। বিয়ে স্থগিত রেখে পুলিশ সুপার নিশ্চয় তদন্তেরই নির্দেশ দিয়েছেন। বাল্যবিয়ে যেমন কাম্য নয়, তেমনই বানোয়াট অভিযোগে কোনো আয়োজন ভেস্তে যাক তা নীরবে মেনে নেয়া উচিত নয়। বাল্যবিয়ে সামাজিক ব্যধি। এ ব্যধিমুক্ত সমাজ গঠনে সর্বপ্রথম প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতন করা। স্কুলছাত্রীদের পথ বখাটেমুক্ত করার বিষয়টি তো আছেই। বাল্যবিয়ে ভেস্তে দেয়ার চেয়ে প্রতিরোধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ কাম্য।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী দর্শনা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জের মেয়ের বিয়ের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো। বিয়ের প্রাথমিক প্রস্তুতি হলেও লোকমোর্চার নেতৃবৃন্দের পদক্ষেপে তা প্রকাশ্যে স্থগিত হলেও গোপনে বিয়ে সম্পাদনের বিষয়টি থেকে যায়। বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো বেশি বেশি করে প্রচার করে সকল অভিভাবককে সচেতন করতে পারলে সর্বনাশা আয়োজন বহুলাংশে হ্রাস পাবে। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠনের পরিবেশ ও তা সুরক্ষার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই।