সংসদে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি

অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজে পেশের পর থেকেই আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। এই দাবি জোরালো হয়েছে খোদ জাতীয় সংসদেও। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে জেদ না ধরার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান। তিনি মানুষের দাবি অনুযায়ী বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে মন্ত্রীর উদ্দেশে মান্নান বলেন, এখানে জেদ ধরার বিষয় নেই। আওয়ামী লীগ মানুষের রাজনীতি করে। মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। মানুষ এ শুল্ক চায় না। যেখানে খোদ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন এবং তারা বলেছেন এটা বাস্তবায়ন করলে জনগণ ক্ষুব্ধ হবে, বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর আমলে নেয়া উচিত। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজেটে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হতে চাই।

এ কথা সত্য, অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট পেশের পর দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। নানাভাবে তাকে বিষোদ্গার ও আক্রমণ করা হচ্ছে। তার সমালোচনা করা হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও। যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, লাখ টাকার মালিকও সম্পদশালী। কী হাস্যকর কথা। মানুষের জীবনযাত্রার মান যেভাবে বেড়ে গেছে এবং মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, দেশব্যাপী দুর্নীতি ও কালো টাকার যে বিপজ্জনক বিস্তার লাভ করেছে এবং যে দেশে একটি ফ্ল্যাটের দাম ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি, একটি গাড়ির দাম ১০ লাখ থেকে ৫ কোটি, এক কেজি নদীর চিংড়ি ও এক কেজি ইলিশের দাম হাজার টাকা, এক কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৬৫০ টাকা সে দেশে লাখ টাকার কী দাম আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক আগেও ছিলো। এবার তা বাড়ানো হয়েছে। আগে যে আবগারি শুল্ক ছিলো, তা সহনীয় ছিলো। মানুষ মনে করছে, বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত। এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করে এই সংশয় দূর করতে হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, বাজেটের কর ও আর্থিক কাঠামোর নীতির ফলে আগামী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। চালের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম না কমানো সবকিছু মিলিয়ে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়ে গেলো। মূল্যস্ফীতি বাড়লে এটার প্রভাব প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রে পড়বে। এজন্য সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে দেশে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির। প্রকৃত অর্থে এবার বাজেটে বাস্তবতার সাথে মিল নেই। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে ব্যাংক হিসাবের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি এলেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ওই শুল্ক ‘নতুন কিছু নয়’। মনে রাখতে হবে, করের চাপটা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের ওপর বেশি আসবে। এই কথার সাথে দেশের সচেতন নাগরিকরা একমত। কেবল তাই নয়, তিনি সঞ্চয়পত্রের দিকেও হাত বাড়াবেন। কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আরও এক ধাপ কমিয়ে দেবেন। তিনি মনে করেন ব্যাংকের সুদের হারের সাথে এর সমন্বয় দরকার।

আমরা মনে করি, অর্থমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত থেকে অচিরেই সরে আসবেন। জনরোষ তৈরি হয় এমন কাজ অর্থমন্ত্রীর করা উচিত নয়। এতে সরকার বিপদে পড়বে।