শ্রম বাজার হারিয়েছে : কমেছে রেমিটেন্স

 

রেমিটেন্সপ্রবাহ কমে যাওয়ার নতুন রেকর্ড হয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়।গত ১৪ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম রেমিটেন্সকমেছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রারপরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৩ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। দেশেরঅর্থনীতিতে রেমিটেন্সের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রেমিটেন্স আয় কমে গেলেজাতীয় অর্থনীতির জন্য তা ভাবনার বিষয় বৈকি। কাজেই এর কারণগুলো দ্রুতচিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, এক সময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো কৃষিখাত থেকে। সোনালি আঁশ, চা ছিলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উপায়। কালক্রমে তাতে ভাটা পড়েছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনশক্তিই এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম পথ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয়বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি শ্রমবাজার হারিয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, যাবাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার। তার ওপর বেশ কটি দেশে নতুন জনশক্তি রফতানিওকমে গেছে। এটি রেমিটেন্স আয় কমার অন্যতম কারণ। দেশে কিছুদিনআগে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও যে এর অন্যতম কারণ তা অস্বীকার করা যায় না। অভিজ্ঞদের মতে রেমিটেন্স হ্রাসের পেছনে আরও একটি বিষয় কাজ করতে পারে।দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশে টাকার মান স্থিতিশীল রয়েছে।টাকার এ শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ব্যাংক চ্যানেলে অর্থ কম আসছে বলেসংশ্লিষ্টদের ধারণা। এসব বিষয় ভালো করে খতিয়ে দেখে রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধিরবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যেরাজনৈতিক অস্থিরতায় ইতোমধ্যেই দেশের জনশক্তি রফতানি খাতে এক দফা আঘাতএসেছে। লিবিয়া, সিরিয়া ও বাহরাইন থেকে অনেক শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন। তবেযেসব দেশে রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল, যেমন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-এ দুই বড় শ্রমবাজারও হারাতে হচ্ছে নানা কারণে। আইনগত জটিলতা এবংকিছু বাংলাদেশি শ্রমিকের অপরাধে জড়িয়ে পড়া এর অন্যতম। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশিনাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধের কারণ হিসেবে আরব আমিরাত সরকার সুনির্দিষ্টকরে কিছু না বললেও একটি সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, জাল পাসপোর্ট ওজাল ভিসা নিয়ে অনেক বাংলাদেশি সেখানে গেছে। অনেকে অবৈধ কাগজপত্রের কারণেগ্রেফতারও হয়েছে। এ বিষয়েও সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। দেশে পাসপোর্ট ওভিসা জালকারী চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও সরকার তাদের প্রতিরোধকরতে পারেনি। এসব চক্রের মূলোৎপাটন করা কত জরুরি,সরকার এখন কি তা অনুধাবনকরবো?

জনশক্তি রফতানি ও বৈদেশিক শ্রমবাজার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিরসনেসরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দারপ্রভাবমুক্ত শ্রমবাজারের সন্ধান করতে হবে জোরেশোরে। মালয়েশিয়া ও দক্ষিণকোরিয়াসহ যেসব দেশে আমাদের জনশক্তি রফতানি একসময় বাধার সম্মুখিন হয়েছিলো, সেসব বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করতে হবে। এ লক্ষ্যে তাদের চাহিদা অনুযায়ী গড়েতুলতে হবে জনশক্তি। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বস্তুতবড় শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পর এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের জোরকূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন।