শোকাবহ মে দিবস এবং আমাদের দেশের শ্রম অধিকার

মেদিবস শ্রমজীবী মানুষের শোকের দিন, অর্জিত অধিকার উদযাপন ও সংহত করারদিন। আজথেকে ১২৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালের ১ মে’র এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরেঅগণিত শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন আন্দোলন। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার ৫৬২টি শিল্প-কারখানাসহ সব শিল্পাঞ্চলে আটঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। শিকাগো শহরের ‘হে’মার্কেটেরূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভের সমুদ্রে। শহরের তিন লক্ষাধিকশ্রমিক কাজবন্ধ রেখে লাল ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে নামেন রাস্তায়। এ সময় আন্দোলনরত ক্ষুব্ধশ্রমিকদের ওপর বিনা উসকানিতে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশেরগুলিতে ওই দিনই নিহত হন ১০ জন শ্রমিক। আহত হন হাজার হাজার। তবু অব্যাহতথাকে ধর্মঘট ও আন্দোলন। এই মহান মে দিবস হচ্ছে পৃথিবীর শ্রমজীবীমানুষের বিজয় নিশান। এই কারণে মে দিবস বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের কাছেঅত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

শ্রমের মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে এ পর্যন্ত রক্তদিয়েছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ। তাই দিনটি শ্রমিক শ্রেণির কাছে ত্যাগেরদিন। নিজেদের জীবন দিয়ে তারা তাদের দাবি আদায় করেছে। তবুও শোষকদের কাছেতারা মাথানত করেনি। এখনো দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ চলছে। বাংলাদেশে এশোষণের মাত্রা কতোটা তীব্র ও ভয়াবহ তা গার্মেন্টসগুলোর দিকে তাকালে সহজেই অনুমান করা যায়। এরপর তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে পদে পদে ধুলণ্ঠিত। তা না হলে রানা টাউয়ার ভেঙে পড়ে? আগুন লেগে শ্রমিক অঙ্গারের ঘটনা তো দেশে বারোমেসে হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা দৃষ্টি বলতেই হয়, এখানে শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্যনেই। হয় আগুনে পুড়ে, না হয় ভবন ধসে অবলীলায় তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এরই মাঝে জিএসপি স্থগিত করেছে আমেরিকা। তাদের ভাষ্য, শ্রমিকদের রক্তে ভেজা পোশাক তারা কিনবে না। এ স্থাগিতাদেশের কষাঘাত যে শ্রমিকদের ওপরই পড়ছে তা প্রভাবশালী দেশগুলো নিশ্চয় অস্বীকার করবে না। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে, তাদেরশোষণ করে উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। এ নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যেপ্রায় দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেয়। তাছাড়া আমাদের দেশে শ্রমিকদের একটি বড় অংশনারী। প্রায় প্রতি বছর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোয় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনাঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা যায়। দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক মারা যায়, তাদের পরিবারের রুটি-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা চোখে-মুখে অন্ধকারদেখে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অকালে মারা গেলে ওই পরিবারের যেকী অবস্থা হয় তা বলাই বাহুল্য। যে সামান্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তা ভবিষ্যতপথ চলার জন্য একবারেই নগণ্য।

আসলে আমরা শ্রম বা শ্রমিকের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি না। বর্তমানরাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ নিয়ে অবশ্যই ভাবতেহবে। কারণ শ্রমিকরা এ দেশের সম্পদ। তাদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচলরয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। মহানমে দিবসের তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, প্রতিষ্ঠা পাক সকল ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার।

নিরাপত্তার অভাবে কর্মস্থলগুলোপরিণত হয়েছে ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে। যাদেরদেখার কথা তারা ব্যস্ত নিজেদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নানাফন্দিফকিরে। সর্বোপরি, শ্রমিকেরা যে সংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজেদেরদাবি-দাওয়া তুলে ধরেন সেই অধিকারটুকুও স্বীকৃত নয় পোশাক শিল্পে।জাতীয় স্বার্থেই অবিলম্বে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিধানই সরকারের প্রধানতমদায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অজুহাত, অবহেলা বা গাফিলতি কাম্য নয়। মহান মে দিবসে সকল শ্রমিককে অভিবাদন। সংগ্রামী শুভেচ্ছা।