শুভ বড়দিন আজ : সকলকে শুভেচ্ছা

আজ বড়দিন। প্রায় দু হাজার বছর আগে এইদিনে বেথলেহেমে কুমারী মাতা মরিয়মের গর্ভে আবির্ভূত হয়েছিলেন মহাপুরুষ যিশুখ্রিস্ট। পৃথিবীর আহ্নিক গতির হিসাবে দক্ষিণ গোলার্ধে আক্ষরিক অর্থে আজ বড়দিন বলা যায়। কিন্তু আমাদের উত্তর গোলার্ধে দিনটি তার বিপরীত। যিশুর ধর্ম-কর্ম-জীবন যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, অসত্য থেকে সত্য পথের দিশা দিয়েছে-যা আজও প্রবহমান। তার আগমন দিনটি তাই বড়দিন।
কথিত আছে, বেথলেহেমের নভোমণ্ডলে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের আবির্ভাব দেখে সুদূরপ্রাচ্যের তিন জ্ঞানী মহাপুরুষ যিশুখ্রিস্টের জন্মের বার্তা পেয়েছিলেন। আকাশে এরকম অভিজ্ঞান দেখে ওই তিন জ্ঞানীপুরুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বেথলেহেমে উপস্থিত হয়েছিলেন শিশু যিশুকে অভিনন্দন জানাতে। ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো, এ শিশুই একদিন মানবতার ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। আজ যিশুখ্রিস্টের জীবন ও বাণী শুধু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীই নয়, পৃথিবীর মুক্তিকামী শান্তিপ্রিয় মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে বলে দাবি করা হয়। খ্রিস্টধর্মের মূল সুরটিই হলো- ভালোবাসা। ঈশ্বর এবং ভালোবাসা দুটি ধারণাই খ্রিস্টধর্মে পাশাপাশি উচ্চারিত হয়। ঈশ্বরকে কেবলমাত্র ভক্তি বা ভয় করাই নয়, তাকেও যে ভালোবাসা যায় এবং বিনিময়ে ঈশ্বরের নিকট থেকে নিছক করুণা বা দয়া নয়, সেই ভালবাসাই পাওয়া যায়। খ্রিস্ট ধর্মালম্বীরা এটা বিশ্বাস করেন।

যিশুকে যারা ভালোবাসেন, বাইবেলের বর্ণনা স্মরণ করে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর জন্মতিথি উদযাপনে গির্জা ও গৃহের উচ্চস্থানে তারকাসদৃশ আলো স্থাপন করেন। এরকম আলোক সংকেতের মধ্যদিয়ে জানানো হয় যে, একদিন যিনি অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে একনিষ্ঠ ও সচেষ্ট ছিলেন, যিনি মানুষের সকল শোক, দুঃখের ভার গ্রহণ করে আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই মহাপুরুষ যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন আজ। খ্রিস্টিয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং জগতের সকল মানুষেরই ত্রাণকর্তা। শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন বলেই তত্কালীন শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। মাত্র ৩৩ বত্সর বয়সে তাকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন উত্সর্গ করতে হয়েছিলো।

সভ্যতা ও সংস্কৃতির সুপ্রাচীন স্তম্ভ হলো ধর্ম। ধর্মই যুগে যুগে মানুষে মানুষে একতা সংহতি এমনকী সংস্কৃতির সেতুবন্ধন রচনা করেছিলো। বলা যায়, সকল ধর্মের মৌলিক ও সারসত্য হলো মানব কল্যাণ ও সম্প্রীতি। এ সত্য আমরা অন্তরে ধারণ করতে পারলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়েই সম্প্রীতিময় হয়ে উঠবে। শান্তিময়, সম্প্রীতিময়, নিজ নিজ ধর্ম, সংস্কৃতিময় হয়ে উঠুক মানুষের প্রতিটি দিন। শুভ বড়দিনে সকলকে শুভেচ্ছা।