শিক্ষা খাতকে কলুষমুক্ত করতেই হবে

শিক্ষা খাতে ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত সিন্ডিকেটের ১১৭ জন শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছেদেশের বিভিন্ন স্থানের অসাধু শিক্ষক, জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেটটি এই ঘুষ-বাণিজ্যে জড়িত। তাই তাদের নামের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, শিক্ষা খাতের দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নিতে চান। বুধবার জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি,সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না। যারা দুর্নীতি করবে, শাস্তি তাদের পেতেই হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এ দৃঢ় অবস্থানের বাস্তবায়ন দেখতে চায় মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে কঠোরভাবে। এ ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রদানের স্থানই নয়, চরিত্র গঠনের স্থানও বটে। তাই শিক্ষকতা পেশায় যারা জড়িত তাদের দেখা হয় অতি সম্মানের দৃষ্টিতে। দুর্ভাগ্যজনক, আজকাল সেই শিক্ষকদেরই অনেকে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই দুর্নীতি।

 জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই একজন শিক্ষকের ঘুষ দেয়া শুরু হয়। এমপিওভুক্তির কাজকে পরিণত করা হয় ঘুষের প্রধান হাতিয়ারে। গড়ে তোলা হয় সিন্ডিকেট। আর এ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষা অফিসের দারোয়ান থেকে শুরু করে উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যন্ত। এ ধরনের সিন্ডিকেট মিলে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিস, বিশেষত মাউশির আঞ্চলিক অফিসগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে বলে জানা যায়। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এমপিওভুক্তির কাজ মাঠ প্রশাসনে ছেড়ে দেয়ার পর এ ঘুষ বাণিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে।

বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর চলছে। অন্যান্য খাতের মতো শিক্ষা খাতেও সরকারের নানা সাফল্য আছে সত্য; তবে এ খাতের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, বিশেষত প্রশ্ন ফাঁস, এমপিওভুক্তি, এমপিওপ্রাপ্তি, স্কুল-কলেজের স্বীকৃতি, বদলি ও পদায়নের জন্য টাকা আদায়ের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় এলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা বিগত বছরগুলোয় কেন নেয়া হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। অথচ শিক্ষার মতো জাতি গঠনের গুরুত্বপূর্ণ খাতটিতে অনিয়ম হলে যে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তা কারও না বোঝার কথা নয়। আশার কথা, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও শিক্ষা খাতের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হবে শুধু সিন্ডিকেটের ১১৭ জন নয়, এদের পেছনে যেসব রাঘববোয়াল রয়েছে, তাদেরও খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা। নয়তো এ খাতের ঘুষ-দুর্নীতি কখনও দূর হবে না। শিক্ষা খাতকে কলুষমুক্ত করতে হবে

যে কোনো উপায়ে। এ জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নজরদারি অব্যাহত থাকবে