লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

 

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের পবিত্র হজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো হজ। অন্য চারটি হলো- কলেমা, নামাজ, রোজা ও জাকাত। পবিত্র মক্কায় হাজির হয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে বায়তুল্লাহ শরিফ অর্থাৎ পবিত্র কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের মাধ্যমে হজব্রত পালন করা হয়। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ পালনের বিধান দেয়া হয়েছে। পবিত্র হজ ও কোরবানি এ দুটি ইবাদত ঐতিহাসিক সম্পর্কসূত্রে গাঁথা। কোরবানি মহান আল্লাহর পথে বান্দার ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। ত্যাগের এ উত্সবের সূচনা হয় চার সহস্রাধিক বছর আগে। খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ সালে নমরূদ বাদশাহর দেহরক্ষী আজরের একপুত্র জন্মগ্রহণ করে। নাম তার ইব্রাহিম। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইলকে এক কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনমানবহীন বিরান মরু প্রান্তরে নির্বাসিত করতে বাধ্য হন। এই বিয়োগান্ত ঘটনার নয় বছরর পর ইব্রাহিম (আ.) চোখে কাপড় বেঁধে পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালিয়ে কোরবানি করেন। তারপর চোখ খুলে দেখেন, পুত্র ইসমাইল জীবিত অবস্থায় পাশে দণ্ডায়মান এবং কোরবানি হয়েছে একটি দুম্বা। সে দিনটি ছিলো দশই জিলহজ। সেদিনের সেই মহিমামণ্ডিত কোরবানির স্মরণেই প্রতি বছর ১০ জিলহজ তারিখে বিশ্বমুসলিম কোরবানি করে থাকেন। পালন করেন হজও। চার হাজার বছর আগে কোরবানি উত্সবের সূচনা হলেও তখন এ উত্সবটির নাম ছিলো ইয়াওমূল মেহেরজান। ষষ্ঠ হিজরি বা ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে হযরত মোহাম্মদ (স.) কোরবানি বা ঈদলু-আজহা নামে প্রথম এ উত্সব উদযাপন করেন। কোরবানি উত্সবেরই একটি বিশেষ অঙ্গ হজ। ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক নির্বাসিত তৃষ্ণার্ত শিশু ইসমাইলের জন্য পানির খোঁজে সাতবার সাফা-মারওয়া পাহাড়ে ছোটাছুটি করেন মা হাজেরা। পরবর্তীতে পুত্র ইসমাইলকে সাথে নিয়ে ইব্রাহিম আ. নির্মাণ করেন পবিত্র কাবাগৃহ। এ ঘর আল্লাহতায়ালার। কাবা শরিফ প্রদক্ষিণ ও কোরবানি করা হজের দুটি আবশ্যকীয় আনুষ্ঠানিকতা।

 

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলমান ধর্মপ্রাণ নারী ও পুরুষ সমবেত হয়েছেন মক্কা শরিফে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বছর বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ হজব্রত পালন করতে গিয়াছেন। আজ হাজিগণ আরাফায় অবস্থান করবেন এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে মুজদালিফায় গমনের মাধ্যমে হজের প্রথম ফরজ পালন করবেন।

 

আরাফাত প্রান্তর মুখরিত হবে লাখ লাখ হাজির কণ্ঠে লাব্বায়েক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক ধ্বনিতে। আজকের এ পবিত্র দিনে আমরা কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।