রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে করদাতা বাড়াতেই হবে

যে কোনো দেশে রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে আয়ের বণ্টন এবং অংশীদারিত্ব। আয়কর ধার্য করে ধণবানদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা এবং সমাজের অন্যান্য অংশের জন্য বিভিন্ন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। ‘উদ্ভাবনে বাড়বে কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে আজ থেকে চুয়াডাঙ্গায় ৪ দিনব্যাপী আয়কর মেলা শুরু হচ্ছে। আর আয়কর মেলার মূল প্রতিপাদ্য- ‘কর সেবায় কর ভিাগের আশ্বাস, নিশ্চিত হোক করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস’। করদাতাদের উৎসাহিত করতে ২০১০ সাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ ধরনের মেলা আয়োজন করছে। উদ্দেশ্য মহৎ, তাতে সন্দেহ নেই। মাত্র দেড় দশক আগেও আমাদের উন্নয়ন বাজেটের আকার ছিলো ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন তা অন্তত ১০ গুণ বেড়েছে। একইভাবে বাড়ছে রাজস্ব আয়। চলতি বছরের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আকার চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের রাজস্ব আয় বিপুলভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলেই বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হচ্ছে। একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আমাদের পরনির্ভরতা কমে আসছে। উন্নয়ন বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য এক সময় বিদেশি ঋণ-অনুদানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা ছিলো। এখন তা বহুলাংশে কমে এসেছে। আমাদের নিজেদের অর্থে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে এ প্রশ্নও সঙ্গত যে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যেভাবে ঘটছে সে তুলনায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর আদায় হচ্ছে কি-না? যারা রিটার্ন জমা দেয়, তারা সবাই কর দেয় না। ফলে করযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ১২-১৩ লাখের বেশি হবে না। বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উঠে গেছে ৪ দশক আগে উন্নত বিশ্ব কর্তৃক ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে চিহ্নিত দেশটি। আমরা উন্নত বিশ্বের সারিতে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য চাই প্রচুর অর্থ এবং তা প্রধানত আসতে হবে শুল্ক ও কর থেকে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তাদের ওপরেই কেবল বাড়তি বোঝা চাপানো নয়, কর আদায় বাড়াতে হলে এর আওতা সম্প্রসারণ করতে হবে। কর দিতে সক্ষম এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই ছাড় পাবে না, এটাই হতে হবে সরকারের অঙ্গীকার। শহর থেকে গ্রাম, ছোট থেকে বড় সব ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগ প্রত্যেককেই উপার্জন অনুযায়ী কর দিতে হবে। আয়কর মেলা এ উদ্দেশ্য সাধনে ভূমিকা রাখবে।