মারণ নেশা উচ্ছেদে আর নয় উদাসিনতা

আমাদের স্টেশন প্লাটফর্মে শুধু বেওয়ারিশ নবজাতকই পড়ে থাকে না, ওয়ারিশ বেওয়ারিশ লাশও মেলে মাঝে মাঝে। শুধু কি লাশ? লাশের পাশে নেশার সরঞ্জামাদিও পাওয়া যায়। যা দেখে বুঁঝতে বাকি থাকে না, বেচারা নেশার কবলে পড়ে বেঘরে প্রাণ হারিয়েছে। এইতো সেদিনও বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের ডাকঘর প্রান্তে পড়ে ছিলো নেশাখোর এক যুবকের মৃতদেহ। ওই যুবকের বড়ভাইও ঝরে গেছে একইভাবে। এভাবে কতজনই যে ঝরছে বা ঝরার দিকে ধাবিত হচ্ছে তার পরিচ্ছন্ন পরিসংখ্যান নেই। থাকলে বিবেকবানদের মাদক বিষয়ে নীরবতা ভেঙে নিশ্চয় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ পরিলক্ষিত হতো। জাগ্রত হতো সমাজ।
মাদকের কালোথাবা কখন কোন অন্দরে ঢুকে তছনছ করতে থাকবে তা আগাম বলা বড্ড কঠিন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সংস্থাসমূহের যে সদস্য মাদকের সাথে আপস করে, মাদককারবারিদের নিকট থেকে উৎকোচ নিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি গড়েন, সেই ভিত্তিই পতনের কারণ হওয়া অমূলক নয়। দেশের বেশ কিছু উদাহরণ স্পষ্ট। ফলে যে কোনো মূল্যে মাদকের ভয়ালগ্রাস থামাতে আন্তরিক হওয়া দরকার। কিন্তু হচ্ছে না কেন? কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজের মতো করে নিজের আখের গোছানোর অঘোষিত দৌড়ে মাদকসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নৈতিকতার স্খলন ঘটেছে। এরই খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের।
সমাজে মাদক, বিশেষ করে ড্রাগজাতীয় নেশাদ্রব্য যতো সহজলভ্য হবে ততোই ছড়াবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ফলে মারণ নেশা উচ্ছেদে আপসহীন হতে হবে। মাঝে মাঝে নয়, মারণ নেশা উচ্ছেদে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে লাগাতার অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। পারিবারিকভাবে শিশুকালেই বিপথগামিতা রোধে সমাজের সাধারণ সচেতনমহলকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। ছিন্নমূল পরিবারের কিছু সদস্যরাই মাদককারবারী রাঘববোয়ালদের উদ্দেশ্য হাসিলে নিয়োজিত থাকে। ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হাতের কাছে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তোলাও জরুরি। মারণ নেশা সর্বগ্রাসী। অনিবার্য করে পতন। উচ্ছেদে আর নয় উদাসিনতা।