মাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন

 

মাদক আমাদের সমাজকে ঘুণের মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। আমরা হয়তো কেউ টের পাচ্ছি, আবার কেউ স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই স্রোত আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে তা কেউই ভাবছি না। জানি না আমাদের কবে বোধদয় হবে। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে মাদকদ্রব্যের খবর। কোথাও অবাধে বিক্রি হচ্ছে, কোথাও ধরা পড়ছে। প্রতিনিয়তই মাদকের কারবার শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছে। এতে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে বিশেষ করে রাজনীতিকদের এর বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান চোখে পড়ে না বললেই চলে। ফলে এর ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি আমাদের আছে। আমরা সে পথে কজনই হাঁটছি। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় এ ধরনের কয়েকটি খবর ছাপা হয়েছে। জীবননগরে মদসহ দু মহিলা গ্রেফতার হয়েছে। দামুড়হুদার দর্শনা ও জগন্নাথপুরে গাঁজা ও ভারতীয় মদ উদ্ধার করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এতো ধরপাকড়ের পরেও কেন থেমে নেই মাদক বিকিকিনি? সত্যিই এ প্রশ্ন আমাদেরকে হতাশ করে।

চুয়াডাঙ্গা ভারত সীমান্তবর্তী একটি ছোট্ট জেলা। ৪টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার জীবননগর ও দামুড়হুদার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ভারত সীমান্ত। ফলে মাদকের কবল থেকে আমাদের বাঁচারজো নেই। প্রতিদিনই হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল কোনো না কোনো আমাদের দেশে ঢুকে পড়ছে ভারত থেকে। কোনো স্থানে হাজার হাজার বোতল ধরাও পড়ছে। কোনো কোনো সময় পুলিশ কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে সে অভিযান হয়ে যায় ঢিলেঢালা। পুলিশ কোনো কোনো মাদকের ঘাঁটিতে চুক্তিবদ্ধ হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আকন্দবাড়িয়া এলাকায় অবাধে মাদক বেচাকেনার অভিযোগ থাকলেও ইদানীং নিয়ন্ত্রিত। আমরা পথে-ঘাটে চলতে গিয়ে দেখি পড়ে আছে ফেনসিডিলের খালি বোতল। দেখা যায় মার্কেট বা কোনো পরিত্যক্ত ভবনের সিঁড়িতে ফেনসিডিলের খালি বোতল। এসব কিসের আলামত? প্রতি বছর বিজিবির তত্ত্বাবধানে হাজার হাজার বোতল ফিনসিডিল ধ্বংস করা হয়। পুড়িয়ে ফেলা হয় গাঁজাসহ বিভিন্ন রকম মাদকদ্রব্য। তারপরেও আমাদের আতঙ্ক কাটছে না কোনোভাবেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য খালি পুলিশকেই দায়ী করলে চলবে না। আমাদের সবারই এ ব্যাপারে কিছু না কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকের সাথে আমরা যেন কোনো আপস না করি। মাদকদ্রব্য শুধু একজন মানুষ বা মেধাকেই শেষ করে না, পুরো পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ছড়িয়ে দেয়। মাদকসেবনকে আমরা ঘৃণা করতে শিখি। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। এভাবেই আমরা মাদক ও নেশাজাতদ্রব্যের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *