মশা নিধনে বেশি বেশি আন্তরিক হওয়া দরকার বটে

মশা যখন মৃত্যুর কারণ তখন মশা যতো ক্ষুদ্র প্রাণীই হোক না কেন ওকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। মশা হরেক কিছিমের। একশ্রেণির মশা ম্যালেরিয়া জীবাণু বহন করে। এরা বন-বাদাড়ে জন্মে বলে এক সময় বাড়ির পাশের বন কাটা বাধ্যতামূলক করা হয়। ম্যালেরিয়ার সেই মশার উপদ্রব কমলেও শহর ও শহরতলীতে এখন ডেঙ্গু মশার উপদ্রব এতোটাই যে, মানুষ প্রাণহানির শঙ্কায় অনেকটাই জড়সড়। অথচ মশার বংশ বিস্তার রোধে যেমন জনসচেতনতায় ঘাটতি, তেমনই মশা নিধনে ও ওর ডিম-লার্ভা বিনষ্টে পৌরসভার দায়িত্বও অনেকটা দায়সারা গোঁচের। ফলে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। মশা নিধনে কালবিলম্ব বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা অবশ্য আড়াই লাখ টাকার বাজেট হাতে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে মশা নিধনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। যদিও কর্মসূচি নিয়ে সন্দেহ শঙ্কা থেকেই যায়। বছরান্তে বাজেট ফুরোয়, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় না। হবেই বা কীভাবে? মশা অল্প কয়েকদিন বাঁচলেও বংশ বিস্তারে অনেকটাই তুলনাহীন। লাখ লাখ মশা জন্ম নেয় অল্প একটু জমে থাকা পানিতে। আর যদি একটু নোংরা পানি পায়, তা হলে তো কথাই নেই। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের অধিকাংশ সড়কের ধারে নির্মাণ করা পয়ঃনিষ্কাশন নালা নির্মাণের সময় থেকেই ত্রুটি যুক্ত। ফলে যে নালা দিয়ে নোংরা পানি গড়িয়ে যাওয়ার কথা, ওই নালায় হয় তার উল্টো। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে কোটি কোটি মশা জন্ম নেয়। এরপর যখন ডাবের পরিত্যক্ত খোলা, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার কিংবা দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করা এবং ফুলগাছের টবে জমে থাকা পানি পেয়ে জন্ম নিচ্ছে প্রাণঘাতি ডেঙ্গুা। গতবছর শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কয়েকদিন আগেও এ মশায় প্রাণ কেড়েছে বলে অভিযোগ। যদিও সরকারিভাবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে এবার গরম শুরু হতে না হতে চুয়াডাঙ্গায় মশার যে উৎপাত তাতে ডেঙ্গুতে এবার শেষ পর্যন্ত কতোজনের প্রাণ কাড়ে কে জানে? এ প্রশ্ন শুধু চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসী বা শহরতলীর নয়, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের প্রায় সকল এলাকায়। পড়শি দেশ পশ্চিমবঙ্গও মশা নিয়ে নেতৃবৃন্দের নাভিশ্বাস স্পষ্ট।
অবশ্যই মশা নিয়ে আর হেলা ফেলা নয়। মশা নিধনে দায়িত্বশীলদের আরও বেশি বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মনে রাখা দরকার, মশা শুধু শিশু আর কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্তের মানুষের রক্তই নেয় না, বড় বড় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ছোট বড় কর্তার শরীরেও সুযোগ বুঝে বসে। রক্ত চোষে। বিষক্ত মশা বসার কারণে প্রাণঘাতি রোগও হতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করে কোনোভাবেই বিষয়টিকে খাটো করে না দেখে মশার বংশ বিস্তার রোধে এবং মশা নিধনে বেশি বেশি আন্তরিক হয়ে গৃহিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা দরকার। এবার এ দরকারি কাজটা সরকারি বেসরকারি সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন বলে বিশ্বাস।