ভোগান্তি দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

সম্পাদকীয়

ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে মানুষ নাড়ির টানে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটে যায়। স্বাভাবিকভাবে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যাত্রাপথের ভোগান্তি দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বলাই বাহুল্য যে, এবারে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ধাপে ধাপে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ও বিআরটিসির প্রায় এক হাজার অতিরিক্ত বাস নামানোর পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু ৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় এবারও এপথে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাবে এবং একই কারণে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়ে সড়কপথের ঈদযাত্রীদের ভীষণভাবে নাকাল হওয়ারও যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এমনিতেই ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর ওপর দীর্ঘ সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় সব ধরনের পরিবহনের গতি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই যানজট বাড়বে। ঈদের আগে টানা বৃষ্টিপাত কিংবা স্বল্পমেয়াদে ভারী বর্ষণ হলে ভাঙাচোরা সড়কগুলো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। এতে পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। যদিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দাবি, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ঈদের ৭ দিন আগেই প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার, মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সাথে মিল রেখে ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত যে একেবারেই অসম্ভব তা খোদ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন। সারাদেশে ৬ হাজার ২০৬ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়কের অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৭৪৫ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১ হাজার ২১৩ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার রয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতাধীন ১৬ হাজার ৬২১ কিলোমিটার সড়ক ও মহসড়কের ওপর চালানো এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। আর গত প্রায় এক বছর এসব সড়কে মেরামতের কাজ হয়নি। এছাড়া এসব সড়ক সংস্কার করার মতো যথেষ্ট অর্থের বরাদ্দ নেই।

সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। কারণ মানুষ সারাবছর পরিশ্রম করে যখন ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে মুখিয়ে থাকে, তখন যদি যাত্রাপথের ভোগান্তি বৃদ্ধি পায় তবে তা অত্যন্ত পরিতাপের। সরকার সংশ্লিষ্টরা সামগ্রিক বিষয়গুলোকে খতিয়ে দেখে যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, দূরপাল্লার যাত্রায় লোকাল কোনো বাস চলতে দেয়া হবে না বলে হাইওয়ে পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দৃঢ়তার সাথে দাবি করলেও বাস্তবে ভিন্ন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে এমনটি উঠে এসেছে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে। বিভিন্নস্থানে লোকাল বাস রঙচং করে এবং নতুন করে সিট বাঁধিয়ে দূরপাল্লার যাত্রার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি দীর্ঘ সড়ক পাড়ি দেয়ার জন্য লোকাল বাসের চালকরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষ লোকাল বাসের চালকরা দূরপাল্লার যাত্রায় গাড়ি নিয়ে নামলে শুধু পথের ভোগান্তিই বাড়বে না; সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়েছে।

সড়ক পথের নিরাপত্তা ও পরিস্থিতিকে আমলে নিতে হবে। ঈদযাত্রাকে সামনে রেখে দূরপাল্লার যাত্রায় লোকাল বাস কিংবা অদক্ষ চালক, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটসহ সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। আসন্ন ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যেন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পায় এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে।