ভাষাসৈনিক মতিনের চির বিদায় : আমরা শোকাহত

 

১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের অনন্য সাধারণ সৈনিক ছিলেন আবদুল মতিন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

 

মহান ভাষা আন্দোলনে আবদুল মতিন অসাধারণ ও আপসহীন ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার নাম। অগ্নিঝরা দিনগুলোতে ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যতো পোস্টার দেখা যায়, তার বেশির ভাগই ছিলো ভাষা মতিনের হাতের লেখা। সারারাত জেগে তিনি পোস্টার লিখতেন। অন্যদিকে আন্দোলন সংগঠিত করতে তিনি দিনরাত কাজ করেছেন। মাতৃভাষার প্রশ্নে তার আপসহীনতা এবং নিষ্ঠা দেখে তার সাথী-সহকর্মীরা তখনই তার নাম দিয়েছিলেন রাষ্ট্রভাষা মতিন। সেই থেকে সংগ্রামী আবদুল মতিন ভাষা মতিন নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন। মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের ইতিহাসের এক অত্যুজ্জ্বল সোপান। একুশে আমাদের জাতীয় জীবনের বাতিঘর স্বরূপ। একুশে উজ্জীবনের এবং উদ্দীপনের। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে পথ দেখিয়েছে অধিকার অর্জনের, পথ দেখিয়েছে মুক্তির।

 

ভাষাসৈনিক মতিন মৃত্যুবরণ করেন পরিণত বয়সে। মৃত্যুর আগে যতোদিন সচল ছিলেন ততোদিন তিনি সক্রিয় ছিলেন সমাজের প্রায় সকল শুভ কাজ ও ভাবনায়। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার বিচরণ ছিলো অভিভাবকসুলভ। মৃত্যুর আগে তিনি দেহ দান করে গেছেন চিকিত্সাবিজ্ঞানের গবেষণা ও শিক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য। চক্ষুও দান করে গেছেন তিনি। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। বিদেহী আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। কামনা করি তার আত্মার অনন্ত শান্তি। তার শোকসন্তপ্ত স্বজন-পরিজনের  প্রতি আন্তরিক সমবেদনা।