ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে,বিগত ৫৪ বছরের দস্তাবেজ ডিঙিয়েছে এবারের তাপমাত্রা। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদেরঅভিমত, আগামী বছরগুলোতে গড় তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে। বেশ কয়েকটি কারণ দেখানো হলেওপানির অপ্রতুলতা ও জলবায়ুতে আর্দ্রতা হ্রাসই মূল। দীর্ঘকাল ধরেদেশের মানুষ নদী-নালা,ডোবা,পুকুরসহ নানা উত্স হতে পানি সংগ্রহ করতো। কালের আবর্তে গভীর নলকূপের ব্যবহার বেড়েছে। গভীর নলকূপ ব্যবহার শুরুর ওই সময় থেকে পরবর্তীবিরূপপ্রভাব সম্পর্কে জোরালো গবেষণা না হলেও কিছু কুপ্রভাব ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তার মধ্যে আর্সেনিক অন্যতম।

গত প্রায় অর্ধশত বছরে উজান থেকে যে হারে পানিরস্রোত হ্রাসপেয়েছে তাতে পানির সনাতনী উৎসর দিকে পুনর্বার দৃষ্টি দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পানির এ উত্সগুলো হয় বর্ষাকালে, বৃষ্টিপাতে ভরে যায় নদী-নালা এবং বছরের পরবর্তী সময়ের চাহিদা মেটায়। ভূগর্ভের পানি স্তরও মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। নদীর পানি ফুটিয়ে নিলেই নিরাপদ হয়। তাতে আর্সেনিক নামক বিষের মাত্রা শূন্য দশমিক ২। আর নলকূপ থেকে যে আর্সেনিক উঠে আসছে তার মাত্রা অধিকাংশ এলাকায় ১০০ দশমিক ৫। আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা দ্রুত বাড়ছে। গভীর নলকূপ ছেড়ে পূর্বের মতো জলাধারায় ফিরতে চাইলেও সুযোগ নেই। তা আমরাই গ্রাস করেছি। উদ্বেগের বিষয় হলো,দেশে যে হারে জলাধার কমে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পানি সংকট আরও ঘনীভূত হবে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা,প্রকৃতির প্রতি ক্রমবর্ধমানউদাসীনতা ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণেই জলাধারের মাটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বারংবার নানা উদ্যোগ নিলেও তা ত্রুটিপূর্ণ অথবা মাঝপথে থেমে গেছে, থেমে যায়।অথচ জলাধার ব্যক্তিমালিকানাধীন বা খাস, প্রাচীন বা অপ্রাচীন যাই হোক, যেকোনো উদ্দেশেমাটি ভরাট করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৯৯৫ সালেরপরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে যে, ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও কোনো জলাধারভরাট করা যাবে না। কেননা প্রকৃতিকে স্বাভাবিক থাকতে দেয়াই আমাদেরপরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক।

অথচ ব্যক্তি মালিকানাধীন জলাধার দূরের কথা, কালের বিবর্তনে স্রোত থেমে যাওয়া নদ-নদী লিজের নামে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে। তারা ভরাট করেছে। বর্ষায় স্রোতধারা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জলাবদ্ধতায় যেমন মাঠের ফসল নষ্ট হচ্ছে, তেমনই পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। পরিবেশরক্ষা বিষয়ক অন্যান্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবেজলাধারা রক্ষার্থেসরকারি বেসরকারি ও সমাজের দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। এটা আমাদের জন্যই প্রয়োজন। তা ছাড়াআগামী প্রজন্মের জন্যএকটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।