ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম চাকুলিয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা

 

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার চাকুলিয়া গ্রামে অপ্রীতিকর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী কে? গ্রামের সাধারণ মানুষ নাকি বিজিবি? পক্ষে বিপক্ষে ভুরি ভুরি যুক্তি থাকলেও কোনো একপক্ষের ত্রুটি যে ছিলো তা অস্বীকার করা যায় না। সে কারণেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দোষী শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অভিন্ন ঘটনা বাড়বে। বাড়বে গ্রামবাসীর সাথে বিজিবির দূরত্ব। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 

চাকুলিয়া গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিজিবির ৫ সদস্যের একটি দল গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায়। ভারত থেকে পাচার করে আনা ফেনসিডিল উদ্ধারের নামে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হলে গৃহকর্তাকে নির্যাতন করে। এ কারণেই গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিজিবি সদস্যদের ঘেরাও করে। তিনজন ক্যাম্পে ফিরলেও দুজনকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পক্ষান্তরে বিজিবির দাবি- অভিযান চালিয়ে ৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীকে আটক করতে গেলে তার স্ত্রীর প্ররোচনায় প্রতিবেশী কিছু নারী ঘিরে ধরে। গ্রামবাসী বিষয়টি না বুঝেই সরকারি কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ঘরে বন্দি রাখা দুজনকে পরে উদ্ধার করা হয়।

 

দুপক্ষের যুক্তি পর্যালোচনায় সমাধান জটিল। ঘটনার মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা আস্থাহীনতা। বিজিবির ওপর শতভাগ আস্থা থাকলে গ্রামবাসী একজন নারীর প্ররোচনায় সরকারি কাজে নিয়োজিতদের বাধা হয়ে দাঁড়াতো? নাকি চোরাচালানীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পেশিশক্তি প্রয়োগ? সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো শতভাগ চোরাচালান মুক্ত নয়। চোরাচালান রোধ শুধু সীমান্তরক্ষী তথা বিজিবিরই নয়, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদেরও। সে দায়িত্ব ক’জন পালন করে? কেউ কেউ চোরাচালান বিরোধী অবস্থান নিলে তাকে উল্টো রোষানলে পড়তে হয়। শুধু চোরাচালানীরই নয়, সীমান্তের কিছু লাইনম্যান হিসেবে উৎকোচ আদায়কারীদেরও। আর গোপন সংবাদদাতা? ওরাও কখনো কখনো বিশেষ বাড়তি সুবিধা চেয়ে না পেয়ে নির্দোষ ব্যক্তিকেও বিপাকে ফেলার ফাঁদ পাতে। সে কারণেই মূলত সীমান্তে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়তে হয় সীমান্তের দায়িত্বশীলদেরও। সে কারণে চাকুলিয়া গ্রামের চিহ্নিত গোপন সংবাদদাতা বা বিজিবির সোর্সকে ধোয়া তুলসি যেমন বলা যায় না, তেমনই গ্রামবাসীর অভিযোগগুলোকে খাটো করে দেখা উচিত নয়।

 

অবশ্যই সীমান্তরক্ষীদের শতভাগ আস্থাভাজন হতে হবে। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েই সীমান্তবাসীর সহযোগিতায় চোরাচালান রোধে সফল হতে হবে। সীমান্তবাসীকেও চোরাচালান রোধে বিজিবিকে সহযোগিতা করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যেহেতু বিজিবিরই কোনো কোনো সদস্য চোরাচালানীদের নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়, চোরাচালান হয়। যেহেতু বিজিবির গোপন সংবাদদাতার মাধ্যমেও বিশেষ সুবিধা আদায়ের অঘোষিত রেয়াজ বিদ্যমান, সেহেতু অভিযোগকে অবান্তর বলে উড়িয়ে না দিয়ে তদন্তের দাবি রাখে।