বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

 

শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিত করতে না পারলে একটি জাতির সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে ইদানিং বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সেরা বিদ্যাপীঠগুলোয় যে হারে সংঘাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অথচ এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কর্মজীবনে প্রবেশ করে ছাত্র-ছাত্রীরা আগামীদিনগুলোকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমনটি প্রত্যাশিত। তাই যৌক্তিক কারণেই এটা উদ্বেগজনক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা রকম সমস্যার মধ্যে নিয়োগ এবং বকেয়া বেতন-বোনাস নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা যেন কাটছেই না। আর এ অবস্থার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেমে এসেছে সীমাহীন অনিশ্চয়তা ও দুর্ভোগ। কেননা আমরা দেখছি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে দীর্ঘ সময় ধরে অচল হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। আবার কখনো কখনো একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর ফের আগের অনিশ্চয়তার পথেই হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

সম্প্রতি পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে আসন্ন সিন্ডিকেটে গণনিয়োগকে কেন্দ্র করে আবারো ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়তে পারে। বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি সত্ত্বেও ফের নিয়োগের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকস  ছাত্রনেতারা। এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন মহল থেকে আন্দোলনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে গণনিয়োগ বন্ধ ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে আবারো আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এর আগেও দীর্ঘ ছয় মাসের মতো অচলাবস্থায় ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি। আর এ ক্ষত না সারতেই আবার যখন অনিশ্চয়তার পথে হাঁটতে শুরু করেছে, তখন সঙ্গত কারণেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ রকম অনিশ্চয়তার চিত্র রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। আশ্বাসের পরও বকেয়া বেতন না দেয়ায় আন্দোলনে যাচ্ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আর স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতনসহ সাত দফা দাবি আদায়ে চাকরি হারানো ৩৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। এই যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র, তবে এতো অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষার মান ও কার্যকারিতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যেখানে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণে নিবেদিত হবে সেখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়েই তৈরি হচ্ছে অচলাবস্থা! আর এ রকম চলতে থাকলে তা শুধু যে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি এমন নয়, বরং পুরো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্যই হুমকিস্বরূপ। যে বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থে একেকজন সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি করার কথা সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অনিয়মে জর্জরিত। অথচ এ ধরনের অনিশ্চয়তায় যে ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ হওয়া কঠিন। কিন্তু তবু নির্বিকার যেন সবাই। একের পর এক ইস্যু তৈরি হচ্ছে আর আন্দোলনের নামে ঘটছে সহিংস ঘটনা। থমকে যাচ্ছে ক্লাস, পরীক্ষাসহ নিয়মিত পাঠদান। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে শিক্ষার্থীরা এবং তাদের যৌক্তিক দাবিতে গর্বে বুক ভরে উঠবে দেশবাসীর।

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সৃষ্ট সমস্যাগুলো শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধক এমন নয়, বরং তা পুরো জাতির জন্যই লজ্জার। আজ যদি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতেই শিক্ষার পরিবেশ থমকে যায়, তবে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে পুরো জাতিকে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।