বিদেশে যাওয়ার আগে সর্বশেষ সঠিক তথ্য জানুন

(নভেম্বর ২৫,২০১৩)

আসসালামু আলাইকুম। ইতঃপূর্বে লিফলেট, ফোন এবং লোক মারফতে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার জন্য আমি নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছি। অনেকেই কথা শুনে উপকৃত হয়েছে- আলহামদুলিল্লাহ। জুলাই ১২, ২০১২ সালে জনস্বার্থে মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম,  মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়নি এবং কবে নাগাদ হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না’ এতোদিন পরও তথ্যটি কতটা সঠিক তা আপনারই বিচার করুন (সরকারিভাবে ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ জনের মতো গিয়েছে অবশ্য)। বর্তমানে বাংলাদেশের বড় শ্রম বাজার যেমন- সৌদি আরব, কুয়েত ইত্যাদি বন্ধ প্রায়। ইরাকে বৈধভাবে লোক যাওয়ার সুযোগ দ্রুত হতে পারে। ইরাকের জন্য প্রস্তুত হওয়া যেতে পারে। বর্তমানে যে সমস্ত দেশে বৈধভাবে লোক যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- ওমান, কাতার, ব্রুনাই, মরিশাস ইত্যাদি। লিবিয়া নিয়ে অনেক প্রতারণা হচ্ছে। লিবিয়া যাওয়ার পদ্ধতি সর্ম্পকে জানা দরকার। প্রথমে মেডিকেল স্লিপ নিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, প্রকৃত সংখ্যক ভিসার বিপরীতে সমসংখ্যক মেডিকেল স্লিপ দেয়া হলেও কিছু অসাধু ব্যক্তি একটি সঠিক মেডিকেল স্লিপের বিপরীতে অধিক সংখ্যক ভুয়া মেডিকেল স্লিপ বের করে প্রতারণা করছে। সুতরাং যাচাই-বাছায় করে মেডিকেল করা দরকার। নতুন নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্তির সনদ নিতে হবে। আরও লাগবে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে পুলিশ কর্তৃক দেয়া ছাড়পত্র। এ তিনটি সনদপত্র জমা না দিলে ভিসা পাওয়া যাবে না।

সাধারণত. খুব দ্রুত পাঠানো গেলেও তাতে প্রায় ২/৩ মাস সময় লাগে। বিদেশে যাওয়ার জন্য ৬-৮ মাস সময় লাগা স্বাভাবিক। প্রতারণার কৌশলগুলো হচ্ছে- (ক) খুব তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবো, বড় জোর ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে (খ) অনেক বেতন (গ) খাওয়া-দাওয়া কোম্পানির (ঘ) সব টাকা এখনই দিয়ে দাও (ঙ) কোনো ট্রেনিং দরকার নেই (চ) ফ্লাইট হবে, ঢাকায় চলে এসো অথচ ফ্লাইটের কোনো খবর নেই, সুতরাং এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত ইত্যাদি ইত্যাদি। যারা ঠকাবে অথবা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মাধ্যম হিসেবে দক্ষ নয় তারা সাধারণত- সব শর্তে রাজি হয়। টাকা-পয়সার বিভিন্ন লোভ দেখানোর পরই সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমাদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে ‘হাত-পা চলে না কিন্তু খুব মুখ চলে’ এটা ঠকার অন্যতম কারণ।

আমরা অনেকেই সঠিক তথ্য না জেনে অন্যকে পরমার্শ দিয়ে থাকি- সেটা অন্যায়। রিজিকের মালিক আল্লাহ মনে রাখতে হবে। অন্য বড় সত্যি হচ্ছে আজ একটা দেশ খোলা, ক’দিন পর তা আবার বন্ধ হয়- আবার বন্ধ দেশ খুলে যায়। তাই নির্দিষ্ট কোনো দেশ বিবেচনা না করে শুধুমাত্র ভালো কোম্পানি ও ভালো বেতন বিবেচনা করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে বিদেশ যাওয়ার নিয়ত করা উচিত।

পাসপোর্টে বয়স যেন ৩৬ বছরের ওপর না হয়। ভোটার পরিচয়পত্রে অনেকেরই বয়স অনেক বেশি থাকে। ৪০ বছরের বেশি বয়সের (পাসপোর্টে) লোকদের বিদেশ যাওয়া কঠিন। এজন্য জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করা যেতে পারে। বয়স ২৩ থেকে ৩৬ বছরের মধ্যে হলে কোনো দেশেই যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা হয় না। বয়সের গরমিলের কারণে অনেকেই সব যোগ্যতা থাকার পরও বিদেশ যেতে পারে না। যে কোনো কাজ জানা থাকলে অথবা শিখে গেলে ভালো। এতে বেতন ভালো হয় এবং যাওয়ার খরচ কমে যায়। বিদেশে যাওয়ার পর অনেকেই কাজ শিখে না যাওয়ার জন্য আফসোস করে। বিদেশে বেশির ভাগ কাজই কন্সট্রাকশনের (রাজমিস্ত্রি, রড বাঁধাই, কারপেন্টার ও হেলপার)।

দয়া করে ফ্রি ভিসায় যাওয়ার আগে বারবার চিন্তা করবেন। ওমানে ফ্রি ভিসায় গিয়ে অনেকেই সে দেশ থেকে নিঃস্ব হয়ে ফেরত এসেছে। যে দেশে যাবেন সে দেশের ভাষা এবং ভালো কাজ জানা না থাকলে ফ্রি ভিসায় যাওয়া বিপদজনক। দয়া করে কোনো ভুল তথ্য দেবেন না। সঠিকভাবে কাজের জন্য সবারই সৎ হওয়া দরকার। আমরা একজন অন্যজনকে ঠকাতে চেষ্টা করলে কেউই লাভবান হবো না। যারা যেতে চায়, তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় প্রশ্নোত্তর বাদে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

মেজর জামান (অবঃ), ফোন-০১৯৬৩০০০৮৮৮/০১৮১৯২৩৬৪৪৪